যশোরের ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড রেড জোন, জানেন না জনপ্রতিনিধি

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর শহরের চার ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডকেও রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই এলাকা লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে ঝিকরগাছার বাঁকড়া এবং অভয়নগরের শ্রীধরপুরকেও রেড জোন ঘোষণা করেছেন সিভিল সার্জন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ বাসিন্দারা এই বিষয়ে অন্ধকারে আছেন।
সিভিল সার্জন বলছেন, জোন বিভাজন করে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে জানিয়ে দেওয়া তার কাজ। বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপ আলাদা। আর বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রধান সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলছেন, কোন এলাকা কখন লকডাউন করা হয়, সেই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ফলে বাস্তবায়ন করবেন কীভাবে? একই বক্তব্য চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরেরও। পৌরসভার মেয়রও জানেন না কিছুই। যশোর পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তৃতি শহরের কেন্দ্রস্থল দড়াটানা থেকে শুরু করে পশ্চিমে সেনানিবাসের কাছাকাছি পর্যন্ত। এর দেিণ শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়ক, উত্তরে ভৈরব নদ। আর ছয় নম্বর ওয়ার্ড শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মাইকপট্টি থেকে শুরু করে ষষ্ঠিতলাপাড়া হয়ে দেিণ রেলস্টেশন এলাকা ছাড়িয়ে চাঁচড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে যথাক্রমে রেল রোড ও মুজিব সড়ক। চার ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি-বেসরকারি বহু অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হাট-বাজার, বাণিজ্যিক এলাকা রয়েছে। চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তা; আর ছয় নম্বরে হাজী আলমগীর হোসেন সুমন। গতকাল বিকেলে শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা দিয়ে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়। দ্রুতগতিতে মাইক চলে যাওয়ায় লোকজন বুঝতেও পারেননি, আসলে ঠিক কী প্রচার করা হচ্ছে। ওই সময় জানতে চাওয়া হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তা বলেন, ‘কিছু সময় হলো লোকজন আমাকে এই প্রশ্ন করছে। আমি তো কিছ্ইু জানি না। ফলে কাউকে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ওয়ার্ডের রায়পাড়ায় একটি বাড়ির ছয় সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল সকাল দশটা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেই বাড়ির দুটি প্রবেশপথ বন্ধ করে এলাকাটিকে অবরুদ্ধ করেছি আমি দাঁড়িয়ে থেকে। সেখানে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি কর্মকর্তারাও গিয়েছিলেন। এরপর আবার কখন গোটা ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত হলো, তার কিছুই আমাকে জানানো হয়নি,’ বলেন কাউন্সিলর মুস্তা। এর পরপরই বিকেল ছয়টার কিছু সময় আগে যোগাযোগ করা হয় জেলার সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীনের সঙ্গে। তিনি এই দুই ওয়ার্ড ছাড়াও জেলার আরো দুটি ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা করে সেখানে লকডাউন কার্যকর করতে বলা হয়েছে বলে জানান।
সিভিল সার্জন বলেন, যশোর শহরের চার নম্বর ওয়ার্ড এবং ঝিকরগাছার বাঁকড়া ইউনিয়নকে মঙ্গলবার এবং শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ড ও অভয়নগরের শ্রীধরপুরকে রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে গতকাল বুধবার।
কখন রেড জোন ঘোষণা করা হলো, কখন লকডাউন করা হচ্ছে, স্থানীয়রা জানতে পারছেন না কেন ?-প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘জোন বিভাজনের (রেড, ইয়োলো, গ্রিন) দায়িত্ব আমার। লকডাউন বা অন্য কোনো পদপে বাস্তবায়নের জন্য আলাদা কর্তৃপ আছে। এই বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপ হলো, সংশ্লিষ্ট উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে লকডাউন বাস্তবায়ন করেন।’ সন্ধ্যায় কিছু সময় আগে যোগাযোগ করা হয় সদর উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান নূরজাহান ইসলাম নিরার সঙ্গে, যিনি নিজেও শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘কোন এলাকা কখন লকডাউন করা হচ্ছে, আমি কিছুই জানতে পারছি না। অথচ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালনকারীদের সমন্বয়ক করা হয়েছে আমাকে। জনগণের প্রশ্নের জবাব তো আমাকেই দিতে হয়।’
‘আমি করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটিরও সদস্য। কিন্তু আমাকে সভায় ডাকা হয় না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কীভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না,’ যোগ করেন নূরজাহান ইসলাম নিরা। একই সময় যোগাযোগ করে জানা গেছে, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুও জানেন না যে, তার দুটি ওয়ার্ড গত দুইদিনে নতুন করে রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে। কারা কী বক্তব্যসম্বলিত মাইকিং করছেন, সেই সম্বন্ধেও তার কোনো ধারণা নেই। বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।