করোনা : যশোরের ১৭টি এলাকা রেড জোন, লকডাউন আজ থেকে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট এলাকা চিহ্নিত করে শেষ পর্যন্ত যশোর জেলার ১৭ টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে যশোর জেলা প্রশাসন। জেলার ছয়টি পৌরসভার ১১টি ওয়ার্ড ও তিন উপজেলার ৬ ইউনিয়নকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া দু’টি পৌরসভার চারটি ওয়ার্ড এবং সাতটি উপজেলার ১৩ ইউনিয়নকে ‘ইয়েলো জোন’ ঘোষণা করে গতকাল সোমবার বিকেলে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। রেড জোন এলাকায় আজ ১৬ জুন মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে লকডাউন কার্যকর করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আবু শাহীন। ইয়োলো জোনে আংশিক লকডাউন হবে এবং গ্রিন জোনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, রেড জোন ঘোষিত এলাকার মধ্যে রয়েছে যশোর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘোপ, সদর উপজেলার আরবপুর ও উপশহর ইউনিয়ন, অভয়নগর পৌরসভার ২, ৪, ৫, ৬, ৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং চলিশিয়া, পায়রা ও বাঘুটিয়া ইউনিয়ন। চৌগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড, শার্শা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড এবং শার্শা সদর ইউনিয়ন, ঝিকরগাছা পৌরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং কেশবপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড।
ইয়েলো জোনের মধ্যে রয়েছে যশোর পৌরসভার ৬ ( পোস্ট অফিস পাড়া, ষষ্টিতলা পাড়া ও চাঁচড়া রায়পাড়া ও ইসমাইল কলোনি),৭ (বেজপাড়া টিবি কিনিক মোড়, আশ্রম রোড, বেজপাড়া কবরস্থান পাড়া ও শংকরপুর) এবং ৮ ( বেজপাড়া) নম্বর ওয়ার্ড, কাশিমপুর ও ফতেপুর ইউনিয়ন, মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া, ঝাঁপা ও কাশিমনগর ইউনিয়ন, অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ, শ্রীধরপুর ও শুভরাঢ়া ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও বাঁকড়া ইউনিয়ন, চৌগাছার স্বরূপদহ ইউনিয়ন, বাঘারপাড়ার বাসুয়াড়ী ইউনিয়ন এবং কেশবপুর উপজেলার কেশবপুর সদর ইউনিয়ন।
সিভিল সার্জন বলেন, রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকা লকডাউন করা হবে। ১৬ জুন সকাল ৬টা থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। সেেেত্র ওই এলাকার মানুষের চলাচল ও বাজার সীমাবদ্ধ এবং চাকরিজীবীদের বাড়িতে বসে কাজ করতে হবে এবং জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীরা সাধারণ ছুটিতে থাকবেন। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন কমিটি স্ব স্ব এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করবে। একই সঙ্গে ইয়েলো জোনের নাগরিকদের জন্য সতর্কতামূলক পদপে গ্রহণে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিকেলে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় অতিমাত্রার সংক্রমণ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা যশোরে করোনা সংক্রমণের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, আজকের সভায় জেলার সিভিল সার্জন রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনের তালিকা উপস্থাপন করেন। তার উত্থাপিত তালিকার পরে আলোচনা এবং অনুমোদন করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে। রেড জোনভুক্ত এলাকাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এসব এলাকায় গেল দু’সপ্তাহে এক থেকে ২০ জন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা প্রশাসক এবং করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। সভায় যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, প্রেসকাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে বিকেলে জারি করা হয় গণবিজ্ঞপ্তি। গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় জোনভিত্তিক সংযমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কৌশল ও গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। গাইডলাইন অনুযায়ী সংক্রমণ প্রতিরোধে যশোর জেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভা (ওয়ার্ডভিত্তিক) রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে বিভাজন করা হলো। রেড জোনকে সম্পূর্ণ ও ইয়োলো জোনকে আংশিক লকডাউনসহ জোনভিত্তিক পালনীয় সাধারণ নিয়মাবলী সন্নিবেশিত করা হলো। আজ ১৬ জুন মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে কোন জোনে কী করা যাবে, কী করা যাবে না তারও সবিস্তার ব্যাখা দেয়া হয়। রেড জোন বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জন্য ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত শিফটে কৃষিকাজ করা যাবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে। তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে। বাসা থেকেই অফিসের কাজ করা যাবে, কোনো ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবল অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। রিকশা, ভ্যান, থ্রি হুইলার ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করা যাবে না, সড়ক, নদী, রেলপথে জোনের ভেতরে কোনো যান চলাচল করবে না, জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী যান কেবল রাতে চলাচল করতে পারবে। এই জোনের অন্তর্গত কেবল মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানে কেবল হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। বাজারে শুধু প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিংমল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত নমুনা পরীা করতে হবে। শনাক্ত রোগীরা আইসোলেশনে (বাড়িতে/আইসোলেশন সেন্টারে) থাকবেন ও মসজিদ/উপাসনালয়ে শুধু প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত ব্যক্তিবর্গ (কর্মচারী) অংশগ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে যশোর অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত ছিলো। কিন্তু গত দেড়মাস ধরে এ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়তে থাকে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ২৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগই চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন রয়েছেন। তবে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে অন্তত ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১০৪ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।