সোয়া দুই লাখ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সরকারের ঋণের সুদ ব্যয় ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। আগামী তিন অর্থবছরে ঋণের সুদ খাতে ব্যয় বহন করতে হবে দুই লাখ ২৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সুদ ব্যয় হবে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এর পরবর্তী দুই অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২০-২১ হতে ২০২২-২৩’-এ এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই হিসাবে আগামী অর্থবছরে শুধুমাত্র দেশীয় ঋণের সুদ খাতে পরিশোধ করতে হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। এর পরবর্তী দুই অর্থবছরে (২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩) যা হবে যথাক্রমে ৬৮ হাজার ৮০ কোটি এবং ৭৮ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময় বিদেশী ঋণের সুদে ব্যয় হবে (তিন অর্থবছরে) যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৫৩০, ছয় হাজার ৮১০ কোটি এবং আট হাজার ৯০ কোটি টাকা।
এই বিষয়ে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বেড়ে যাবে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সরকার মধ্যমেয়াদে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে এনে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা করেছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২৩ অর্থবছর নাগাদ প্রক্ষেপিত হয়েছে জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ (ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের অনুপাত হবে ৪.৩)। অন্যদিকে এই সময়ে বহিঃউৎস থেকে অর্থায়ন জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়। মধ্যমেয়াদে ব্যয়বহুল ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের পরিমাণ (যেমন সঞ্চয়পত্র) কম থাকবে এবং ব্যাংক ঋণ হতে ঘাটতি অর্থায়ন প্রধান অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে থাকবে।’ এসব কারণে ঋণের সুদ ব্যয় কিছুটা বেড়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে বলা হয়েছে, ‘রেয়াতি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে বহিঃউৎস হতে স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়ন সুবিধা পেয়ে আসছে। যেমন বাইরের অর্থায়নের বিপরীতে অন্তর্নিহিত সুদ হার ছিল গড়ে ১ শতাংশ এবং বিগত পাঁচ বছরে (২০১৪-১৫ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর) বহিঃঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় ছিল বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। তবে অনুদানের অংশ কমে যাওয়ায় ও ঋণের অংশটি বেড়ে যাওয়ায় বহিঃঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় সামান্য বেড়েছে।’
এদিকে ছয় বছরের ব্যবধানে সরকারের সুদ ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ১১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যেখানে বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা; সেখানে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এ সময় অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয়ও পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে অধিক হারে ঋণ নেয়ার কারণে এই ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় চার হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় তিন হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ছিল তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা ও এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।