চিনি আমদানি ১০.৪% কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চিনির নতুন বিপণন মৌসুম শুরু হয়। চলে পরের বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেই হিসেবে দেশটিতে চিনির নতুন বিপণন মৌসুম শুরুর আরো সাড়ে তিন মাস বাকি আছে। তবে এরই মধ্যে আসন্ন ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমে চিনি আমদানির নতুন প্রাক্কলন প্রকাশ করেছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আসন্ন মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে চিনি আমদানি আগের প্রাক্কলনের তুলনায় সাড়ে ১০ শতাংশ কমতে পারে। মূলত বাড়তি উৎপাদনের জের ধরে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির মজুদ আগের তুলনায় ক্রমেই বাড়তির দিকে থাকায় আমদানি কমানো হতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর বিজনেস রেকর্ডার ও রয়টার্স।
চিনি আমদানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। ইউএসডিএর সাম্প্রতিক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টন চিনি আমদানি করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানটির আগের পূর্বাভাসের তুলনায় পণ্যটির আমদানি কমতে পারে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।
এদিকে ইউএসডিএর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আসন্ন ২০২০-২১ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে ৯০ লাখ টন চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগের মৌসুমের তুলনায় এ সময় দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন বাড়তে পারে ১২ শতাংশ।
উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আসন্ন ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে চিনির মজুদও চাঙ্গা থাকতে পারে। ইউএসডিএর সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে চিনির প্রারম্ভিক মজুদ দাঁড়াতে পারে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টনে। গত মে মাসে প্রকাশিত ইউএসডিএর একটি প্রতিবেদনে এর সম্ভাব্য পরিমাণ ১২ লাখ ৭০ হাজার টন উল্লেখ করা হয়েছিল।মূলত বাড়তি উৎপাদনের পাশাপাশি মজুদের এ চাঙ্গা ভাব আসন্ন ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে চিনির আমদানি কমাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তবে চলতি বছরের শুরুতেই চিনি আমদানির বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ইউএসডিএ। ওই প্রতিবেদনে ২০২০ সাল শেষে যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে ২৮ লাখ ৬৬ হাজার টন চিনি আমদানির প্রাক্কলন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মার্কিন আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ২৮ লাখ ১৬ হাজার টন চিনি আমদানি করেছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির আমদানি কমেছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির ওই প্রতিবেদনের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ হাজার টন বাড়তি চিনি আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এর আগে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চিনি আমদানি হয়েছিল। ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছিল।
এদিকে একই প্রতিবেদনে ইউএসডিএ প্রাক্কলন করেছিল, চলতি বছর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখ ৬৬ হাজার টন চিনির মজুদ গড়ে উঠতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম। ২০১৯ সাল শেষে দেশটিতে চিনির মজুদ ছিল ১৬ লাখ ১৪ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ কম।
তবে বছরের মাঝামাঝি এসে চিনির মজুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ইউএসডিএ। আর এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে দেশটিতে চিনির বাড়তি উৎপাদন। এ পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোয় চিনির বাজার নিয়ে চিত্রপট বদলানোর সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক দেশে চিনির বাড়তি উৎপাদন ও বিপুল মজুদ পণ্যটির বাজার পরিস্থিতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আমদানি কমালে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি বেচাকেনা অনেকটাই কমে আসবে। এর জের ধরে কমে আসতে পারে চিনির দাম।