কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের বাঁচানো যেতো: হাইকোর্টে প্রতিবেদন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। রোববার (১৪ জুন) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে অগ্নি দুর্ঘটনা চলাকালে আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।’ পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ ৪ টন শীতাতপ যন্ত্র থেকে ধোঁয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা, ইমাজেন্সি অ‌্যালার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপন দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ করলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হতো। এছাড়া উক্ত এসি হতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে (ডাক্তার, ৩ জন নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী) আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।’ ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নি নিরাপত্তা অফিসার উপস্থিত ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার ও অগ্নি নির্বাপনকারী দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল। আইসোলেশন সেন্টারে সকল প্রকারের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার ছিল। ইউনাইটেড হাসপাতাল স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে দেশি-বিদেশি গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় সেবাপ্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের আইসোলোশন সেন্টার নির্মাণ ঠিক হয়নি। অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দ্বারা তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি প্রতিরোধ যোগ্য নির্মাণ সামগ্রী দ্বারা এ ধরনের আইসোলোশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিলো।’
ডিএমপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। এছাড়া তিন সরকারি সংস্থাই তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদির বেশিরভাগই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজো।’ হাইকোর্টে দাখিল করা রাজউকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলোশন সেন্টার নির্মাণ করে। কিন্তু রাজউকের কোনো ধরনের অনুমোদন তারা নেয়নি।’ অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুপারিশ: ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন প্রশিক্ষণ ও ফায়ার অ‌্যান্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
এছাড়া হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ‌্যে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করে তাদের থেকে ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নি নির্বাপন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া বিএনএসবির আলোকে ভবনের বেজমেন্টে কোনো স্থাপনা যেমন-অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেজমেন্ট শুধুমাত্র গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে বলে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে। গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। রোববার হাসপাতালের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান আদালতে বলেন, তদন্ত রিপোর্টগুলো দেখে আমরা আমাদের ব্যাখ্যা দাখিল করতে চাই। এরপরই আদালত তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে ২২ জুন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।