এখনো জোন ঘোষণা করা হয়নি ; যশোরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা : একদিনে আক্রান্ত ২০

0

বিএম আসাদ ॥ যশোর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। গতকাল আক্রান্ত হয়েছে আরও ২০ জন। এ নিয়ে দু’শ’ ছাড়িয়ে গেল করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। আক্রান্তদের ভেতর পুলিশ অফিসার, স্বাস্থ্যকর্মী, বিমানবাহিনী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, প্রবাসী ব্যবসায়ী, গৃহিনী ও গৃহ-পরিচারিকা রয়েছে। আক্রান্তরা হোম আইসোলেশন হাসপাতাল আইসোলেশনসহ লকডাউনের আওতায় রয়েছেন। আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি হলেও যশোর এখনো কোন জোনের আওতায় আনা হয়নি। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ১২ জুন রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৩৭টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। তাতে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ জন। এ নিয়ে ওই দিন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ জন। গতকাল (১৩ জুন) যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১শ’ ২টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এ রিপোর্টের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭ জন। কিন্তু অভয়নগরের মহিলা-পুরুষ মিলে আক্রান্ত দু’জনের নাম থাকলেও ঠিকানা না থাকায় তাদের দু’জনের নাম প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে খোঁজ করে ওই দু’জনের নাম-ঠিকানা উদ্ধার করে আক্রান্তের সংখ্যা দেখানো হয় ১৭ জন। সবই মিলে গত ২৪ ঘন্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত যশোরে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১শ ২ জন। আক্রান্ত ২০ জনের ভেতর যশোরের শার্শা উপজেলার রয়েছে ২ জন। তারা দু’জনই পুলিশ অফিসার। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সাব-ইন্সপেক্টর। শার্শা উপজেলায় এ পর্যন্ত ২২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। যশোর সদর উপজেলায় গতকাল আক্রান্ত হয়েছে ৪ জন। আক্রান্তদের ভেতর একজন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কাজ করেন। অপরজন হাসপাতালের এমএলএসএস। তার বাড়ি অভয়নগরের বনগ্রামে। তাকে অভয়নগর উপজেলায় আক্রান্ত দেখানো হয়েছে। অন্য দু’জনের ভেতর একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। বাড়ি সদর উপজেলার এনায়েতপুরে। অন্যজনের বাড়ি পাঁচবাড়িয়ায়। তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। শহরের বেজপাড়ার এক গৃহবধূ কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। সদরে মোট আক্রান্ত ২৯ জন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আক্রান্ত মো. ৩৩ জন। কেশবপুরে আক্রান্ত ২ জন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের দু’জন কাজের মেয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি, তার স্ত্রী ও কন্যা করোনায় আক্রান্ত হন। ফলে, ওই পরিবারে সবাই আক্রান্ত হলেন। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়কের স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোর ইবনেসিনা হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়সহ ওই বাসার ৪ জন জন কেশবপুর হোপস আইসোলেশনে রয়েছেন। অভয়নগর উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে গুয়াখোলা গ্রামের একই পরিবারের স্বামী ও স্ত্রী রয়েছেন। অপর আক্রান্ত ব্যক্তি ফুলেরগাতি গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া শংকরপাড়া গ্রাম, বনগ্রাম ও বুইকারা গ্রামের ১ জন করে এবং নওয়াপাড়ায় ২ জন বাসিন্দা রয়েছে আক্রান্তদের ভেতর। ঝিকরগাছা উপজেলায় একজন ব্যবসায়ী আক্রান্ত হয়েছে। তার বাড়ি ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগরে। মনিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুরে ১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ঢাকায় মেঘনা গ্রুপে অফিসার পদে চাকরি করেন। বাঘারপাড়া উপজেলার বাওয়াড়ী ইউনিয়নের পাকের আলী গ্রামের এক গৃহবধূ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চৌগাছা উপজেলার কাকুড়িয়া গ্রামে এক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। তিনি কুয়েত প্রবাসী। গত ডিসেম্বর (২০১৯) কুয়েত থেকে আসেন। এ নিয়ে শুরু থেকে যশোর জেলায় এ পর্যন্ত ১শ’ ২ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন।
যশোরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। তবে করোনার মার্ক নির্ণয়ে এখনো যশোরের ‘মার্ক’ নির্ণয় হয়নি। অন্তর্ভুক্ত হয়নি করোনা নির্ধারিত জোনে। করোনায় আক্রান্ত ১২ জন হাসপাতাল আইসোলেশনে ও ৮৬ জন হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের ভেতর ১শ’ ১ জন করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অভয়নগরের একটি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য গতকাল ১শ’ ১৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।