বাজেট: স্বাস্থ্যের বরাদ্দ নিয়ে হতাশা, সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কোভিড-১৯ মহামারীর প্রোপটে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাশা ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে আশাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলছেন, দেশের অন্যতম শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে স্বাস্থ্য। কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের খবর হরহামেশাই পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মহামারী মোকাবিলায় অপ্রতুল এই বরাদ্দও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য ইন্টার্নশিপ শেষ করেছেন ডা. আনিকা তাহসিন। তার মতে, স্বাস্থ্যখাতের চরম দুরবস্থা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই মহামারী। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত জীবনরাকারী স্বাস্থ্য উপকরণ থেকে শুরু করে আইসিইউর অভাব দেশের রোগীদের তীব্র ভোগান্তির কারণ হয়েছে। “স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে স্বভাবতই সকলের উচ্চাশা ছিল। কিন্তু সে আশার গুঁড়ে বালি।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিার্থী তন্ময় সাহা জয় বলেন, “প্রতিটি জেলা/উপজেলা হাসপাতালে ভালো টেস্টিং ল্যাব, জনবল নিয়োগ বা আইসিইউ বাড়াতে বাজেটে বরাদ্দ আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল। পাশাপাশি ওষুধ গবেষণা ও ওষুধ আমদানির বিষয়েও বরাদ্দ আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে বলেন, “বাজেটে বরাদ্দের পাশাপাশি বাজেট ব্যবহার নিশ্চিত করার দিকে জোর দিতে হবে। এবারের করোনায় অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। এগুলো অবশ্যই দূর করা উচিত। “বাজেটে টাকা বেড়েছে কিন্তু অন্য দেশের তুলনা করলে তা পর্যাপ্ত না। বাজেট অন্য বছরও ছিল। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রচুর যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অন্যদিকে খরচ করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি তহবিল হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের বাইরে স্বাস্থ্যখাতের বাজেটকে একেবারেই গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই থোক বরাদ্দ যেন ব্যাপকতর দুর্নীতির সুযোগে রূপান্তরিত হতে না পারে তার পথনকশা থাকতে হবে। “বাজেটের কথামালায় স্বাস্থ্য খাতের কথা বারবার উচ্চারিত হলেও এডহকভিত্তিক কয়েকটি উদ্যোগ ছাড়া সেবার মান বাড়ানো এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কোনো পরিকল্পনাই নেওয়া হয়নি। যেটি হতাশাজনক ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতি উদাসীনতার ও সময়ের অনুপযোগী প্রাধান্যের প্রতিফলন।” তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বাজেট টাকার অংকে বাড়লেও শতাংশের হিসেবে (মোট বাজেটের ৫ দশমিক ১ শতাংশ) বিদায়ী বছরের (৫ দশমিক ৮ শতাংশ) চেয়েও বিব্রতকরভাবে কমে গেছে। স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দিলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট হয়নি বলে মনে করছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুল হক খোকন বলেন, স্বাস্থ্যখাতের বেহাল চিত্র মহামারীতে প্রকট হয়েছে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দরকার ছিল। তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মতে এবারের বাজেট ‘যুগান্তকারী, সময়োপযোগী ও জনকল্যাণমুখী’। স্বাস্থ্যে বাজেট বরাদ্দ বাড়লেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য বাজেট প্রত্যাশার সীমা অনুযায়ী হয়নি। বিভিন্ন দেশ স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ রাখে তার সমান না হলে স্বাস্থ্যসেবা ওই পরিমাণে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে মূল বাজেটে কোনো পরিবর্তন আসেনি। “প্রতিবছরই পুরো বাজেট খরচ হয় না। যথা সময়ে টাকা পাওয়া যায় না। তাছাড়া সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নিয়োগ না করে আমলাদের দিয়ে স্বাস্থ্য খাত পরিচালনায় অদতা রয়েছে। সব মিলিয়ে সুফল পাওয়া চ্যালেঞ্জ হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে বাজেটটা খারাপ না। তবে সেটার ব্যয়ের খাত স্পষ্ট না করলে কিছু বলা যাচ্ছে না। জরুরিভিত্তিতে যেটা বাড়িয়েছে, সেটা খরচ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমতা নেই।” বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেন, মহামারীর কারণে গত তিন মাসের লকডাউনের তি বিবেচনায় বাজেট সুদূরপ্রসারী হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন-জীবিকা প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল, বাজেট আরও সম্প্রসারণশীল হওয়া উচিত ছিল। “সমাজে মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। কিছু ধনী আরও ধনী হচ্ছে। দরিদ্ররা আরোও দরিদ্র হচ্ছে। বেকারত্বের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এসব পরিস্থিতিতে করোনার তি মোকাবিলায় আমাদের এই বাজেটের আকার আরও বড় হতে পারত।”