যশোরে যুবতীকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি ও ধর্ষণের অভিযোগ,আটক ২

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের বকচরে যুবতীসহ কয়েকজন আটকিয়ে লাখ টাকা চাঁদা দাবি, মারধর ও ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে গত বুধবার বিকেলে কৌশলে পুলিশ আটক করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার যুবতী শহরের পুরাতন কসবায় বাসিন্দা। তার পূর্ব পরিচিত শার্শা উপজেলার গোড়পাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে সবুজ (২০) গত ৯ জুন মঙ্গলবার বিকেলে যশোরে আসেন। কিন্তু পরে রাতে থাকার প্রয়োজন হওয়ায় তিনি ওই যুবতীর সাথে যোগাযোগ করেন। এদিন সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শহরের মণিহার এলাকা থেকে সবুজকে ইজিবাইকে করে যুবতী তার বান্ধবীর নানি সালমা খাতুনের বকচর চৌধুরীপাড়ার বাসায় নিয়ে যান। সালমা খাতুনের স্বামীর নাম সাইফুল ইসলাম। তারা জনৈক ডা. মাহাবুবের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সেখানে সবুজকে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে পরে বাসায় ফিরে যাবার জন্য রাস্তায় এলে ওই যুবতীর ওপর চড়াও হয় ৯ জন দুর্বৃত্ত। তারা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফের বান্ধবীর নানি সালমা খাতুনের বাসায় যেতে বাধ্য করে। এরপর তারা সবুজ ও যুবতীকে একটি ঘরে নিয়ে বলে, ‘তোরা খারাপ কাজ করেছিস, তোদের চেক করবো’। এ সময় যুবতী, সবুজ ও বান্ধবীর নানা সাইফুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা তাদের মারধর এবং মোবাইল ফোনে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। এই ভিডিও ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তারা সবুজ ও যুবতীর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা সবুজকে ফের মারধর করে। এক পর্যায়ে রাত ১০ টার দিকে দুর্বৃত্তদের মধ্যে করিম নামে একজন তাদের সকলের সাথে দৈহিক সম্পর্কের জন্য যুবতীকে কু-প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে রাজি হলে সবুজকে বাঁচানো যাবে বলে সে জানায়। কিন্তু যুবতী এ প্রস্তাবে রাজি না হলে জুম্মান ও জুলহাস নামে দুই দুর্বৃত্ত তার শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ ঘটনার পর যুবতী ও সবুজকে বান্ধবীর নানির বাসায় আটকে রেখে অন্য দুর্বৃত্তরা চলে গেলেও সেখানে থেকে যায় করিম (একই ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া করিম)। এরপর রাত একটা থেকে পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত করিম ওই যুবতীকে বিভিন্ন রুমে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩ দফা ধর্ষণ করে। কিন্তু এরপর করিম যুবতী ও সবুজকে ছেড়ে দেয়নি। তাদেরকে বান্ধবীর নানি সালমা খাতুনের বাসায় আটকে রাখে। এরপর সকাল নয়টার দিকে অন্য দুর্বৃত্তরা ফের ওই বাসায় এসে যুবতীদের কাছে লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলে। ফলে টাকা নিয়ে আসার কথা বলে যুবতী কৌশলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে তিনি সবুজের ভাইয়ের সহায়তায় কোতয়ালি থানা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। তারই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ফাঁদ পেতে করিম ও জুম্মান নামে দুই দুর্বৃত্তকে আটক করে। করিম ও জুম্মান দড়াটানায় যুবতীর কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিতে এসেছিলো। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা পুলিশ এ সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে। পরে পুলিশ বকচরে ফাতেমা খাতুনের বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে সবুজকে। কিন্তু আর কোন দুর্বৃত্তকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী যুবতী ৯ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছে-নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আসাদুজ্জামানের ছেলে বর্তমানে যশোর শহরের বকচর চৌধুরীপাড়ার জনৈক ডা. মাহাবুবের বাড়ির ভাড়াটিয়া সৈয়দ করিমুজ্জামান ওরফে করিম, বকচর মসজিদপাড়ার আশরাফ হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন ওরফে জুম্মান, বকচরের শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস, মৃত আকরামের ছেলে রুবেল, আবু বক্কার সিদ্দিকীর ছেলে তাজুল, জবেদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ, তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে রাজিব, মৃত রবির ছেলে বকুল ও রেজাউল ইসলামের ছেলে জাকির। একটি সূত্র জানায়, ধর্ষক করিম বিবাহিত। তার শ্বশুরের নাম আকরাম হোসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (ইন্টিলেজেন্স অ্যান্ড কমিউনিটি পুলিশিং) সুমন ভক্ত জানান, আটক করিম ও জুম্মানকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া ভিকটিম আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।