ঘরে ঘরে উপসর্গ টেস্ট ছাড়াই চলছে চিকিৎসা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সর্দি, কাশি, জ্বর। কখনো গলা ব্যথা। এসবই করোনার উপসর্গ। এরকম রোগী এখন ঘরে ঘরে। কিন্তু তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না, তা নিশ্চিত নন। টেস্ট বিড়ম্বনাসহ নানা কারণেই তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। শনাক্ত না হলেও চিকিৎসা থেমে নেই। ডাক্তারের পরামর্শেই ওষুধ সেবন করছেন তারা।
ঘরোয়া টোটকা নিচ্ছেন। এভাবেই অনেকে সুস্থও হচ্ছেন। তাদের মধ্যে কারও অবস্থার অবনতি হলেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। উপসর্গ দেখা দেয়া রোগী ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। উপসর্গ নিয়ে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর তুরাগ এলাকার এক নম্বর সড়কের বাসিন্দা এক দম্পতি। প্রায় এক সপ্তাহ আগে জ্বর ও কাশি দেখা দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমিন উদ্দিনের। এরমধ্যেই জ্বর কমে গেলেও কাশি ও গলায় ব্যথা ছিলো। করোনা টেস্ট করাতে উত্তরায় চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সিরিয়াল পাননি। শেষ পর্যন্ত ভোরে ছুটে যান শাগবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতার ভবনের সামনে। পরে জানতে পারেন এখানে লাইনে দাঁড়ালে আগের মতো টোকেন দেয়া হয় না। অনলাইনে আবেদন করে সিরিয়াল পেলে তবেই টেস্ট করা হয়। আমিন উদ্দিন জানান, পরবর্তীতে অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু সিরিয়াল মিলেনি। আর চেষ্টা করছেন না। তিনি জানান, কিছুদিন ধরে তার স্ত্রী রুমিরও জ্বর, কাশি দেখা দিয়েছে। বাসাতেই ঘরোয়া টোটকা নিচ্ছেন। গরম পানিতে আদা, লেবু, লবঙ্গ, এলাচ, দারচিনি মিশিয়ে ভাপ নিচ্ছেন। পান করছেন। সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শে কিছু ওষুধ সেবন করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ৩৫৩ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ধাপে ধাপে এই টেস্ট করানো হয়। প্রত্যেকেই অনলাইনে টেস্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। সিরিয়াল পেয়ে মেডিকেলে যান। এতে রোগীদের আগের চেয়ে কম ভোগান্তি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে রাত ১২টায় লাইনে দাঁড়িয়েও পরদিন টেস্ট না করাতে পেরে ফিরে যেতেন বেশিরভাগ মানুষ। বাস্তবে এখন আগের মতো দৃশ্য দেখা না গেলেও অনলাইনে সিরিয়াল না পেয়ে টেস্ট থেকে বিমুখ হচ্ছেন রোগীরা। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা গেছে অনেকেই টেস্ট না করাতে পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের একজন আব্দুল হক। মিরপুর-১১ থেকে এসেছিলেন টেস্ট করাতে। কিন্তু অনলাইনে আবেদন করে সিরিয়াল না পাওয়ায় টেস্ট করাতে পারেননি তিনি। আব্দুল হকের মতো অনেকেই এভাবে ফিরে যাচ্ছিলেন। কর্তব্যরতরা জানান, ৩ শ’ রোগীর টেস্ট করা হলে এরমধ্যে ১শ’ থাকে বিশেষ কোটায়। তারা মূলত স্বাস্থ্যকর্মী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিক। ২শ’ রোগী থাকেন সাধারণ কোটায়। এছাড়া অনলাইনে আবেদন ছাড়াও আশঙ্কাজনক রোগী ও গর্ভবতীদের করোনা টেস্ট করা হয়। গত ১৮ই মে থেকে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে টেস্ট করা হচ্ছে।
খিলগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিন রহমান। প্রায় চার দিন ধরে জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে বাসায় রয়েছেন। করোনা টেস্ট করাতে বিভিন্ন মেডিকেলে যোগাযোগ করেও সুরাহা হয়নি। টেস্টের হাল ছেড়ে ডাক্তারের পরামর্শে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা সুমন আহমেদ জানান, তার বৃদ্ধা মা অসুস্থ। হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস রয়েছে তার। এরমধ্যে জ্বর, কাশি দেখা দিলে হাসপাতালগুলোতে যোগাযোগ করেন। কিন্তু টেস্ট করানোর সুবিধা পাচ্ছিলেন না। সুমন জানান, তিনি চেয়েছিলেন বাসা থেকে কেউ নমুনা সংগ্রহ করুক। কারণ তার মা বয়স্ক হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত বাসাতেই চিকিৎসা করাচ্ছেন তারা। গতকাল জানান আগের চেয়ে তার মায়ের অবস্থা ভালো। রামপুরা এলাকায় অন্তত ১২ জন এরকম রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। টেস্ট ছাড়াই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও সেবন করছেন। বেসরকারি মেডিকেলে কর্মরত ডা. শাফি উদ্দিন আহমেদ জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ টেলিফোনে পরামর্শ চান। তারা টেস্ট করাতে পারছেন না। বলতে গেলে ঘরে ঘরে সর্দি, কাশিসহ এ ধরণের উপসর্গের রোগী রয়েছে। এই অবস্থায় তাদের পরামর্শ দিতে হচ্ছে। ওষুধ সেবনের বিষয়েও বলতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের উপসর্গ মূলত সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা। টেস্টের সুবিধা না পেলেও চিকিৎসাতো থেমে থাকবে না। তবে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে বলে জানান তিনি।