মোংলায় ঘূর্ণিঝড়ে তলিয়ে যাওয়া দুই হাজার চিংড়িঘের মালিক দিশেহারা

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যাওয়া মোংলার প্রায় দুই হাজার চিংড়ি ঘের মালিক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ে তাদের অন্তত দু কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে। এতে পথে বসার উপক্রম হয়েছেন প্রান্তিক চিংড়ি চাষি ও রফতানিকারকরা। সংকট কাটিয়ে উঠতে এখন পর্যন্ত সরকারি তেমন কোন সহযোগিতা তারা পাননি।
লোনা পানি অধ্যুষিত সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলাসহ আশপাশের এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময়ই বাগদা চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। অবশ্য খুব স্বল্প পরিসরে গলদা চিংড়ির চাষও সাম্প্রতিককালে শুরু হয়েছে। লবণ আবহাওয়ার কারণে এখানে ধান ও অন্যান্য ফসল ভাল উৎপাদন না হওয়ায় স্থানীয়রা সাধারণত চিংড়ি চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অন্যান্য বারের মতো এবারও বাগদা চাষ মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক চাষিরা হোচট খেতে শুরু করেন। লক ডাউনে হ্যাচারিগুলো বন্ধ থাকায় রেণু পোনার সংকট দেখা দেয় চরমে। এর পরও যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন হয় তা আবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বিদেশে রফতানিতে ব্যাপক ধস নামতে শুরু করে। এ অবস্থায় বাগদা চিংড়ির দাম কমতে থাকে আশঙ্কাজনকভাবে। করোনার চলমান পরিস্থিতিতে চিংড়ি মাছের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে চার ভাগের এক ভাগ। চিংড়ির ন্যায্যমূল্য না পেয়ে প্রান্তিক চাষিরা যখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে ঠিক তখনই নেমে আসে মরার উপর খারার ঘা। সদ্য আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মোংলার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এখানকার এক হাজার ৮ শ ৬৫ টি ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে অন্তত দু কোটি টাকার চিংড়ি মাছ। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। তারা দ্রুত সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
মোংলা উপজেলায় ৮ হাজার ৬ শ ৬৪ হেক্টর জলাশয়ের মধ্যে ৩১৫ হেক্টরে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে সরকারি নিবন্ধিত ঘেরের সংখ্যা ৫ হাজার ৬০১ টি। ৫ হাজার ৮ শ ৭৩ জন চাষি চিংড়ি চাষের সাথে সরাসরি জড়িত। বেসরকারি হিসেবে এ ঘের ও চাষির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। প্রতিবছর এখান থেকে গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি উৎপাদন হলেও এবার ঘূর্ণিঝড় আর করোনার কারণে এ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় মৎস্যবিভাগ। মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত। এর ওপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে এখানকার বিভিন্ন এলাকার ঘের ভেসে চিংড়ি বের হয়ে গেছে। এতে প্রায় দু কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব চাষির সরকারি প্রণোদনা বা সহযোগিতার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, চিংড়ি শিল্প ধ্বংস হলে বেকার হয়ে পড়বেন কয়েক লাখ মানুষ। পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে প্রান্তিক চাষিদের। আর ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দেউলিয়া হবেন রফতানিকারকরা।