সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যয় সংকোচনের নির্দেশনা থাকছে বাজেটে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অহেতুক, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহারের নির্দেশনাসহ তৈরি করা হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেট। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যয় সংকোচনের নির্দেশনা থাকছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নতুন অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় সংকোচনের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা চলছে। সূত্র জানায়, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট তৈরি হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনা সংক্রমণ ও অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে সরকার নানামুখী কৌশল গ্রহণ করছে। জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার এবারের বাজেট বক্তৃতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ব্যয় কমানোসহ যেসব নির্দেশনা দেবেন সেসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-
১. সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হবে। খুব জরুরি না হলে আগামী বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেকোনও প্রোগ্রামে অংশ নিতে বিদেশে যেতে পারবেন না। যদি যেতেই হয় তাহলে যাওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। রাষ্ট্রের স্বার্থ থাকতে হবে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি বা জিও ছাড় করার আগে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে খুঁটিনাটি বিষয় অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে দেখে জিও ছাড় করার পরামর্শ থাকতে পারে।
২. অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ রাখতে হবে। যেসব জিনিসপত্র কিনতে হবে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব থাকতে হবে। একই সঙ্গে কিনতে হলে তা সঠিক পরিমাণ মতো হতে হবে। কোনও ধরনের অপচয় করা যাবে না।
৩. সরকারি সভা সেমিনারের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। অনুষ্ঠিত সভা-সেমিনারের আপ্যায়ন খরচ কমাতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আপ্যায়ন ব্যয় পরিহার করতে হবে। সভা সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও কমাতে হবে। এ ছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী ভাতার হার আগের তুলনায় কমিয়ে আনারও চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
৪. ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন মুদ্রণ কাজ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় মুদ্রণ পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনের বেশি মুদ্রণ করা যাবে না। যা মুদ্রণ করা হবে তার যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সরকারি কাজে ব্যবহৃত মেশিনপত্র, বিশেষ করে ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার, পানির ফিল্টার, ফ্রিজ, টেলিভিশন অতি প্রয়োজন না হলে নতুন কেনা যাবে না। আগের কেনা এসব জিনিসপত্র যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। মেশিনপত্রসহ আসবাবপত্র নষ্ট হলে তা কম খরচে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র জানায়, করোনা মোকাবিলায় সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে ব্যয় বাড়বে, তাই ওই ব্যয় মেটাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হচ্ছে। এছাড়া করোনার প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে এটা নিশ্চিত। তাই ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য সরকারের থাকতে হবে।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগসহ মূলধনী ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা এবং খাদ্য হিসেবে ব্যয় হবে ৫৬৭ কোটি টাকা। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনা মহামারি বিবেচনায় বিভিন্ন মহল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেছিল। তবে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকায় তা দেওয়া হয়নি। তবে স্বাস্থ্য খাতে চলতি বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাজেট তৈরি করছে। যা আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন বছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এডিপি চূড়ান্ত করেছে এনইসি। করোনার প্রেক্ষাপটে তৈরি করা বাজেটটি অবশ্যই জনবান্ধব হবে এটি আমার বিশ্বাস। এখানে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষরা এবারের বাজেটে উপকৃত হবেন।