বিনা চিকিৎসায় আর কত মৃত্যু ?

0

একদিন দু’দিন করে প্রায় তিনমাস হলো দেশের করোনা পরিস্থিতির। দীর্ঘ এসময়ে সারা পৃথিবীতে সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রায় সকল েেত্র এসেছে আমূল পরিবর্তন। স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতার বিস্তার ঘটেছে দেশে দেশে। করোনা আক্রান্তের প্রতি মানুষের ভীতির বদলে বেড়েছে দায়িত্ব কর্তব্য বোধ। মানবিক আচরণ হয়েছে অনুকরণীয়। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। এখানে দিন যাচ্ছে আর মানবতাই ‘করোনা’ আক্রান্ত হচ্ছে। ডাক্তার নার্স কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই এর শিকার হচ্ছে। সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ এ পরিস্থিতি পরিবর্তন দূরে থাক ন্যুনতম সামাল দিতে পারছে না। তারা আসলে পারছে না না-কি কোনো চেষ্টাই করছে না এটাই এখন মানুষের কাছে প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ মানুষ সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন যে অমানবিকতার পাশাপাশি সরকারের স্বাস্থ্য কর্তৃপরে যে নীরবতা বা অমতা দেখছে তাতে এ প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। অতিসম্প্রতি বিনা চিকিৎসায়কয়েকটি মর্মান্তিক মৃত্যু সরকারের দায়িত্বশীলতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তিনমাসেও সরকার কেনো হাসপাতালগুলোকে মানুষের চিকিৎসালয় বানাতে পারলো না এবং চিকিৎসকসহ তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে পারলো না।
সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানুষের এই অভিযোগ ও ােভের যুক্তি বা ন্যায্যতা প্রমাণে সর্বশেষ দুটি খবরের শিরোনামই যথেষ্ট হবে বলে আমরা মনে করি। খবর দুটি গত দুদিনে লোকসমাজসহ দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। শনিবার প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল “ভর্তি নেয়নি কোনো হাসপাতাল, স্ত্রীর চোখের সামনেই স্বামীর মৃত্যু”। আর গতকাল রবিবার প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল “হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে গাড়িতেই মৃত্যু আরো একজনে”। দুটি ঘটনাই ঘটেছে খোদ রাজধানীতে। প্রথম ঘটনার শিকার কুষ্টিয়ার নুর আল আহাদ। তার স্ত্রী রিনা ইসলাম জানিয়েছেন জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে প্রায় চার ঘন্টা রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ছুটেছেন। কিন্তু কেউ ভর্তি নেয়নি, কোনোরকম মানবিকতা দেখায়নি।অক্সিজেন অভাবে চোখের সামনে তার স্বামী ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। মাত্র ৩২ বছর বয়সী নুুর তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান এবং সে নিজেও তিন বছর বয়সী এক সন্তানের পিতা ছিল। পত্রিকার খবর অনুযায়ী নুরের পুরো পরিাবর এখন পাগলপ্রায়। দ্বিতীয় খবরের শিকার রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী এনায়েত উল্লাহ। তার জামাই জানিয়েছেন ৩০মে এনায়েত উল্লাহ বাথরুমে পড়ে মাথায় আঘাত পান। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সব শুনেও ডাক্তার তাকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। কিন্তু তার ট্রলি ধরতে রাজি হয়নি কেউ। পরে সেখান থেকে শশুরকে নিয়ে শুধুমাত্র অক্সিজেন দিতে একের পর এক হাসপাতালে গিয়ে কারো সাহায্য সহযোগিতা পেলেন না। কয়েক ঘন্টা গাড়ি নিয়ে ঘোরার পর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি নিতে রাজি হয়। কিন্তু ভাগ্য তার পে ছিল না তাই গাড়ি থেকে নামানোর আগেই ফুরিয়ে যায় তার নিজের অক্সিজেন। করোনা লক্ষ্মণ না থাকার পরও আহত এই মানুষটির কোনো চিকিৎসা দিলেন না চিকিৎসকরা, কোনো কর্মচারী ছুঁয়েও দেখলেন না। সরকারকে রাজস্ব দেয়া মানুষটি মৃত্যুকালে সর্বত্র শিকার হলেন অমানবিকতার। এখানে বলেরাখা যায় গত তিনমাস ধরে হাসপাতাল, কিনিক ও চেম্বারে এই অবস্থা চলছে। এনিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর হৈচৈ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে খুব কঠোর হবার ঘোষণা দিয়েছেন। চিকিৎসকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বলা চলে, তারা প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখেননিম, এটা একটি অপরাধ। তারপরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যভস্থা নিচ্ছে না তা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। আমরা মনে করি, করোনা ভয়ে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে যারা রোগীর প্রতি অমানবিক আচরণ করছেন তাদের বিরুদ্ধে চাকুরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর্তাদের মনে রাখতে হবে, যাদের তারা চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তারা এদেশের রাজস্বদাতা নাগরিক। সংবিধানের মূলস্তম্ভে চিকিৎসা পাওয়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এ থেকে বঞ্চিত করার কোন অধিকার কারো নেই। আমরা আশা করবো, চিকিৎসকরা আত্মরক্ষার সুযোগ নিয়ে সকল রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন। তারা মানুষের প্রাণরক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।