যশোরে ভেজাল স্পিরিট পানে মাদকসেবীদের মৃত্যুর দাবি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিট পানে যশোরে একাধিক মাদকসেবীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সরেজমিনে তদন্তে তারা এমনটা পেয়েছেন। এই ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রির মূল হোতা যশোর শহরের বেজপাড়া বি কে রোডের (বস্তাপট্টি) নিউ আইডিয়াল হোমিও ফার্মেসির মালিক কাজল ঘটকসহ ৩ জনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। ওই হোমিও ফার্মেসি থেকে এক লিটার ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিটও উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রেতা কাজল ঘটকসহ ৩ জনকে মদপানে খন্দকার শাহিন হোসেন মৃত্যুর মামলায় আদালতে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
গত এপ্রিলের শেষের দিকে যশোরে ভেজাল অথবা বিষাক্ত মদ পানে একাধিক মাদকসেবীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় হয়। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নড়েচড়ে বসে। মদপানে ৩ জন যথাক্রমে শহরের ঘোপে মৃত আব্দুর রাজ্জাক চিশতির ছেলে শরিফুদ্দিন মুন্না, শহরতলীর বালিয়াডাঙ্গা মান্দারতলার সাখাওয়াত আলী বিশ্বাসের ছেলে ফজলুর রহমান চুক্কি এবং শেখহাটি কালীতলা কাজীপাড়ার খন্দকার আরশাদ আলীর ছেলে খন্দকার শাহিন হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা করেন তাদের স্বজনেরা। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে গত ২৭ এপ্রিল দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এই কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন-ওই দফতরের ইনসপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান এবং ইনসপেক্টর বাপন সেন। তাদেরকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু পরে তদন্তে কমিটি মাদকসেবীদের মৃত্যুর ঘটনায় কী তথ্য পেয়েছে জানতে চাওয়া হলে কোন জবাব মেলেনি যশোরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. বাহাউদ্দিনের কাছ থেকে। বরং তার কাছে এ তথ্য জানতে চাওয়ার কারণে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটিতে থাকা ইনসপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক আবুল হোসেনের সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন। অতিরিক্ত পরিচালক আবুল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, তিনি ওই কমিটির সাথে যশোর ও মনিরামপুরে সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। মূলত বৈধ মদের দোকান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এক শ্রেণির মাদক ব্যবসায়ী ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিট সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এই ভেজাল স্পিরিট পানে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্তে তারা পেয়েছেন। তিনি বলেন, মনিরামপুরে যে ৩ জন মারা গেছেন তাদের বাড়িতে তারা গিয়েছিলেন। একজনের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন মদ সেবন করতে না পেরে ওই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।
অতিরিক্ত পরিচালক আবুল হোসেন জানান, যশোর শহরতলীর শেখহাটিতে মদপানে মৃত্যুবরণকারী খন্দকার শাহিন হোসেনের বাড়িতে তারা গিয়েছিলেন। সেখান থেকে জানতে পারেন ওই এলাকার মৃত নিমাই হালদারের ছেলে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী তপন হালদারের কাছ থেকে ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মদ সেবন করতে খন্দকার শাহিন হোসেন। এরপর ১২ মে তারা তপন হালদারকে তার বাড়ি থেকে আটক করেন। এ সময় তার ঘর থেকে ৫০ মিলিলিটার ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিট এবং ৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেন। পরে তপন হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন, তার কাছ থেকে শাহিন ছাড়াও কয়েকজন রেক্টিফাইড স্পিরিট পান করেছিলেন। পরে শুনেছেন এই স্পিরিট পানে শাহিনসহ কয়েকজন মারা গেছেন। তপন হালদারও স্পিরিট পান করেছিলেন। এর ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার কারণে তিনি সুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া তপন হালদার একথাও স্বীকার করেন যে, রেক্টিফাইড স্পিরিট বেজপাড়া বি কে রোডের নিউ আইডিয়াল হোমিও ফার্মেসি থেকে তিনি নিয়মিত সংগ্রহ করতেন। পরে তার স্বীকারোক্তিতে নিউ আইডিয়াল হোমিও ফামের্সিতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ এবং ভেজাল এক লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট তারা উদ্ধার করেন। এ সময় ফার্মেসি মালিক কাজল ঘটক এবং তার ভাই বিশ্বজিৎ ঘটককে তারা আটক করেন। এ ঘটনায় তপন হালদার, কাজল ঘটক এবং বিশ্বজিৎ ঘটকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যশোরের ইনসপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান জানান, যারা অবৈধভাবে রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ভেজাল মদপানে খন্দকার শাহিন হোসেনের মৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই হারুন অর রশিদ জানান, যেহেতু ভেজাল রেক্টিফাইড স্পিরিট পানে শাহিনের মুত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে এবং বিক্রেতার সন্ধান মিলেছে এ কারণে নিউ আইডিয়াল হোমিও ফার্মেসির মালিক কাজল ঘটকসহ ৩ জনকে মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে দেয়া অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী হাসানের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ রেক্টিফাইড স্পিরিট পানে মাদকসেবীদের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া তিনি রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবসার সাথে যাদের নাম প্রকাশ করেছেন এমন ১৩ জনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। সুইপারপট্টির মাদক ব্যবসায়ী এবং সুলতান নামে আরো একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা যায়নি। অপরদিকে মদ পানে শরিফুদ্দিন মুন্নার মৃতুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি এ মামলায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করেছেন।