এপ্রিলে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন ১৩ শতাংশ কমল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর ধাক্কা লেগেছে ইস্পাত উৎপাদন খাতে। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে ১৪ কোটি টনের নিচে নেমে এসেছে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দেড় শতাংশ কমে ৪৫ কোটি টনের নিচে নেমে আসার তথ্য দিয়েছে। খবর মেটাল বুলেটিন ও রয়টার্স।
ডব্লিউএসএর সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানভুক্ত ৬৪ দেশে সব মিলিয়ে ১৩ কোটি ৭১ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। মূলত চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিশ্বের প্রায় সব দেশ নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি রয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এ কারণেই এপ্রিলে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনে বড় পতন দেখা দিয়েছে। এ সময় চীনে সামান্য বাড়লেও বিশ্বের অন্যান্য ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ ও অঞ্চলে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে রেকর্ড পতন বজায় ছিল।শুধু আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নয়, বরং গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদনে মন্দা ভাব দেখা গেছে। ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে প্রতিষ্ঠানভুক্ত দেশগুলোয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কমে সব মিলিয়ে ১৪ কোটি ৭১ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন কমেছে ১ কোটি টন।
চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ। গত এপ্রিলে দেশটিতে ৮ কোটি ৫০ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির শুরু থেকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে চীন। মার্চের শেষ নাগাদ দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হয় লকডাউন। এ কারণে এপ্রিলে চীনের ইস্পাত উৎপাদন খাত গতি ফিরে পেয়েছে। বেড়েছে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন।
ডব্লিউএসএ জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ ভারতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। টানা লকডাউন চলমান থাকায় এ সময় ভারতে সাকল্যে ৩১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।একই চিত্র দেখা গেছে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ জাপানে। চলতি বছরের এপ্রিলে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৬৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলোয় গত এপ্রিলে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ কম। ইইউভুক্ত দেশগুলোয় এ সময় শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১ কোটি ৭ লাখ টনে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ।প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে ব্রাজিলে ১৮ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কম। এ সময় তুরস্কে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ কমে উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ টন ইস্পাত।ইউক্রেনে গত মাসে উৎপাদন হয়েছে ১৪ লাখ টন ইস্পাত, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ কম। ডব্লিউএসএ জানিয়েছে, রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত দেশগুলোয় চলতি বছরের এপ্রিলে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৬৬ লাখ টনে নেমে এসেছে।
শুধু এপ্রিলে নয়, নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেও বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় ছিল। ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সংস্থাভুক্ত ৬৪ দেশে সব মিলিয়ে ৪৪ কোটি ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এ সময় চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ৩১ কোটি ৫২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এশিয়ার দেশগুলোয় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ।
একই চিত্র দেখা গেছে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়ও। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৮৩ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টনে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ কম।