কোয়ারেন্টিনেই থাকছেন অসুস্থ খালেদা জিয়া

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শারীরিকভাবে এখনো অসুস্থ। ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খেতে পারছেন না ভালোভাবে। হাতের আঙুলগুলো এখনো ফোলা, বাঁকানো। এই অবস্থায়ও খোঁজখবর রাখছেন দেশের মানুষের, দলের নেতাকর্মীর। নিজে অসুস্থ হয়েও করোনায় আক্রান্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ফোন করে নিয়েছেন অসুস্থতার খবর, জুগিয়েছেন সাহস, পাঠিয়েছেন ফলসহ উপহার সামগ্রী। নির্দেশনা দিচ্ছেন অসহায়, দুঃস্থ, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। যার যার সামর্থ অনুযায়ী চালিয়ে যেতে বলেছেন ত্রাণ কার্যক্রম। সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতারা সাক্ষাত করতে গেলে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি প্রধান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারামুক্ত হয়েছেন ২ মাসেরও বেশি হয়েছে। করোনা দুর্যোগের কারণে এখনো তিনি কোয়ারেন্টিনেই থাকছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা। এর আগে মুক্ত থাকা অবস্থায় প্রতিটি ঈদেই নেতাকর্মীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এবার অসুস্থতা ও করোনার কারণে সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল না। স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া দেখা করেননি আর কারো সাথেই। ঈদের দিনে বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় এসে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন। তারা বাসা থেকে পায়েস, ফিরনি, সেমাইসহ খালেদা জিয়ার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন। যদিও এসব তিনি খেতে পারেন নি। এছাড়া প্রবাসে থাকা ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনীদের সাথে কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি থাকার পর ঈদের দিন সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাঁর সাথে সাক্ষাত করেন। মঙ্গলবার সাক্ষাত পান নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বুধবার দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। সাক্ষাত শেষে প্রত্যেকেই বেগম জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) মানসিকভাবে ভালো আছেন। তবে শারীরিকভাবে তিনি এখনো অসুস্থ। ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছেন না। ভাল করে খেতে পারছেন না। ওনার হাতের আঙুল সেভাবে নাড়াতে পারেন না।
ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয়নি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও তিনি কিছু বলেন নি। তবে তিনি সবার খোঁজখবর নিয়েছেন। আর এই মহামারীতে দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ঈদের দিন বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলীয় প্রধানের সাথে দেখা করতে যান। সাক্ষাত শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনোবল না হারাতে দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। করোনা মহামারি প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঘরে থাকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিধি মেনে চলার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘরে থাকুন, সাহস হারাবেন না। খালেদা জিয়া বলেন, বাড়িতে থাকুন, একটু কষ্ট করুন। বাড়িতে থেকেই এই সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে হবে। জনগণ যেন ঘরে থাকে এবং এই মহামারিকে প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে সমস্ত বিধান দিয়ে তা যেন তারা মেনে চলে। মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যে, এত প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, এখন সাহস না হারিয়ে দাঁড়াতে হবে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক অবস্থা আমি আগেও বলেছি উনার কোনো ইম্প্রুভমেন্ট হয়নি। ইম্প্রুভমেন্ট মধ্যে যেটুকু হয়েছে উনি আগে থেকে মানসিক অবস্থাটা তার অনেক ভালো হয়েছে, শারীরিক অবস্থার তার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। এখনো তিনি কোয়ারেন্টিনেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিএমপি মহাসচিব। এদিকে নিজের শারীরিক অবস্থতার মধ্যেই গত মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসুস্থতার খোঁজখবর নিয়েছেন বেগম জিয়া। তিনি তাঁর বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দীন দিদারের মাধ্যমে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্য ফুল ও ফলসহ উপহার সামগ্রী পাঠান। পরে ডা. জাফরুল্লাহর সাথে ফোনে কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার শারীরিক অসুস্থতার খোঁজখবর নেন এবং তার নিজের জন্য দোয়া করতে বলেন। একইভাবে ডা. জাফরুল্লাহও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার খোঁজখবর নেন এবং তার করোনা রোগ থেকে আরোগ্যের জন্য দোয়া কামনা করেন।