ঈদে দেশের প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাম্য ডাক কর্মচারীর মুখে হাসি ছিলনা

0

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর)॥ পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বে সম্মানি ভাতা না পাওয়ায় দেশের প্রায় ২৫ হাজার ডাক বিভাগের গ্রাম্য ডাক কর্মচারী ইডি (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল) কর্মচারী ও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বেকার থাকা সাড়ে ৮ হাজার ডিজিটাল পোস্ট উ-সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মূখে হাসি ছিলনা। সরকারী এই বিভাগ (ডাক বিভাগ) যেন দেখার কেউ নেই। চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে এই বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে বলে গ্রাম্য ডাক বিভাগের প্রবিন কর্মকর্তারা মনে করেন। সামান্য সম্মানি পেয়ে চাকুরী করেন এই বিভাগের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারী। কিন্ত সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বেও সরকারী সকল দপ্তরের বেতন, বোনাস দেয়া হলেও গ্রাম্য ডাক বিভাগের কর্মচারীরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে পবিত্র ঈদুল ফিতরে তাদের মূখে হাসি ছিলনা। জানাগেছে, এখনো প্রতিটি গ্রাম্য ডাক কর্মচারীর মাসিক বেতন (সম্মানি) ৪ হাজার টাকার কিছু উপরে। ফলে এত অল্প টাকা বেতনে চাকরী করতে হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার ইডি কর্মচারীর। সারাদেশে ডাক বিভাগে কর্মরত ২৪ হাজার ৩৯ জন কর্মচারী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে গ্রাম্য পোষ্ট অফিসের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ১৩ টি । সেই হিসেবে প্রতিটি শাখায় তিন জন করে হলে ২৪ হাজার ৩৯ জন ইডি কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই গ্রামের শিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত পুরুষ ও মহিলা। ডাক বিভাগের কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন শাখা পোষ্ট মাষ্টার এক জন, চিঠি বিলিকারী এক জন ও ডাক বহনকারী (রানার) এক জন। এসব কর্মচারীদের বেতন শাখা পোষ্ট মাস্টার ৪ হাজার ৪ শত ৬০ টাকা, চিঠি বিলিকারী ৪ হাজার ৩ শত ৫৪ টাকা এবং ডাক বঞনকারী রানারের বেতন ৪ হাজার এক শত ৭৭ টাকা। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প বেতনে চাকরী করে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতার জীবন-জাপন করছে এ বিভাগের কর্মচারীরা। আমাদের দেশের তুলনায় পার্শবতী রাষ্ট্রে একই চাকরীতে তাদের বেতন ২০/২২ হাজার টাকা বলে ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে এসব কর্মচারীদের বেতন তার ৫ ভাগের এক ভাগ। এসব কর্মচারীদের সরকারী জাতীয় পে-কমিশন অনুযায়ী কোন বেতন স্কেল নেই। বর্তমান সরকার সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠান সমূহকে উৎসবভাতাসহ সকল ভাতা প্রদান কেেছন। অথচ ডাক বিভাগের প্রায় ২৫ হাজার এসব কর্মচারীদের জন্য কোন উৎসব ভাতার ব্যবস্থা নেই। গ্রাম্য পোষ্ট অফিসের এসব ইডি কর্মচারী ইউনিয়ন বিভিন্ন সরকারের সময়ে প্রায় ২০/২২ বছর ধরে সরকারের কাছে উৎসবভাতার দাবী জানিয়ে আসলেও তার এখনো পর্যন্ত সুরাহ হয়নি। সামান্য বেতনে ডাক বিভাগের এসব কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতার জীবন-যাপন করছেন। এছাড়া বর্তমান সরকার কর্তৃক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াল লক্ষে কয়েক বছর ধরে এই বিভাগের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডিজিটাল পোস্ট ই-সেন্টারে একজন করে উদ্যোক্তা বিনা বেতনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কম্পিউটার চালিয়ে আয়ের ২০% সরকারের কোষাগারে জমা দেয় উদ্যোক্তারা । আয়ের বাকি ৮০ শতাংশ উদ্যোক্তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালায়। কিন্ত চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাম ডিজিটাল পোস্ট ই-সেন্টার গুলি বন্ধ থাকায় চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন উদ্যোক্তারা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আবে দেশের সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও ডাক বিভাগের উদ্যোক্তা এবং গ্রাম্য ডাক কর্মচারীদেরকে কোন সহযোগিতা করেননি বলে জানাগেছে। এব্যাপারে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গাজিরদরগা অফিসের ডাক বহনকারী রফিকুল ইসলাম জানান, অতার পিতা মাত্র ৩শ’ টাকা বেতনে চাকরী শুরু করেছিলেন এবং তিনি দীর্ঘদিন এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তার মৃত্যূর পর তিনি উক্ত চাকরী করছেন। বর্তমান বাজারদরে সামান্য বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। উপজেলার মির্জাপুর পোষ্ট অফিসের বিলিকারী জিন্নাত আলী বলেন, ১৯৯৬ সালে ৫ শত ৫৬ টাকা বেতনে এই চাকুরীতে যোগদান করি। বর্তমান ৪ হাজার ৩ শত ৫৪ টাকা বেতন (সম্মানি) পায়। এই টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই চিঠি বিলির সাথে সাথে কিছু দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করেন। দুটো মিলে কোনরকমে সংসার চলে যাচ্ছে। তার মত পাল্পারবাজারের ডাক বহনকারী মাহাবুবুর রহমান, বাঁকড়ার বিলিকারী ইদ্রিস আলীও ডাক বিভাগের চাকুরীর সাথে সাথে দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চলে বলে জানাগেছে। পাল্পার ডাক বহনকারী মাহাবুবুর রহমান জানান, এভাবে সংসার চালানো সম্ভাব না সরকার আমাদের এই বিভাগের দিকে নজর না দিলে ডাক বিভাগের বহু কর্মচারী না খেয়ে মরবে। বিষয়টি বর্তমান সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মানবিক দৃষ্টিতে দেখার, এবং গ্রাম্য ডাক কর্মচারীদের দুঃখ লাঘবের আহবান করেছেন তিনি।