ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী মুখোমুখি, জরুরি বৈঠক রাজনাথের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারত ও চীনের চলমান সংঘাতের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতসহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতসহ তিনবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ওই বৈঠকে লাদাখের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে চীনা সেনাদের হাতাহাতি ও সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর থেকে উভয় দেশের সীমান্তে উত্তেজনার পরিস্থিতি রয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রায় একঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে ভারত কীভাবে চীনকে জবাব দিচ্ছে সে সম্পর্কে রাজনাথ সিংকে অবহিত করা হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, চীনের সাথে চলমান বিরোধ আলোচনা ও কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করা হবে। তবে যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনও দাঁড়িয়ে আছে, সেখানেই থাকবে। এছাড়া ভারত যে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে। এদিকে চীনের একনাগাড়ে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভারতও তার স্থাপনা বাড়িয়ে তুলবে। লাদাখের ঘটনার জন্য ভারত নিরাপত্তার নিরিখে তীক্ষ্ণ নজরদারি করেছে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি কঠোরভাবে নজর রয়েছে। সম্প্রতি পূর্ব লাদাখ ও সিকিমের নাকু লা সেক্টরে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর থেকে দু’দেশেই উত্তেজনার পরিস্থিতি রয়েছে। শুধু লাদাখই নয়, গত একমাসে তিনটি ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম সেক্টরে লাদাখ, পূর্ব সেক্টরে উত্তর সিকিম এবং উত্তরাখণ্ডের কাছে উভয় দেশই মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। চীন এরইমধ্যে লাদাখ সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে কমপক্ষে ৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী পূর্ব লাদাখ সেক্টরে মোতায়েনের জন্য ভারী পরিবহণ বিমান ব্যবহার করেছে। দৌলত বেগ ওল্ডি সেক্টরে বিমানের সাহায্যে সেনা জওয়ানদের জড়ো করা হয়েছে। এজন্য হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য উপায়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
সীমান্তে চীনা সেনা সমাবেশ ও তাদের তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের সাবেক নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুডা বলেছেন, ‘এটা খুবই গুরুতর ঘটনা। চীনা সেনারা এর আগেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতের এলাকায় ঢুকেছে। কিন্তু এবার সেইসব এলাকায় চীনা সেনা সমাবেশ ও অন্যান্য প্রস্তুতি অভূতপূর্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘গালওয়ানে চীনা সেনা সমাবেশই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক! কারণ, এই এলাকাটি নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো দিনই কোনো বিরোধ ছিল না।’ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অশোক কে কণ্ঠও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এর আগে ওই এলাকায় বহুবার চীনা সেনা ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এবারের ঘটনাটা আগের বারেরগুলোর মতো নয়। খুবই উদ্বেগজনক!’ সেনা সূত্রের খবর, প্যাংগং সো, ডেমচক ও দৌলত বেগে পরিস্থিতি এখন এমনই, যে কোনো মুহূর্তে ভারতীয় ও চীনা সেনারা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। গালওয়ান উপত্যকায় গত দু’সপ্তাহে ১০০ টিরও বেশি তাঁবু খাটিয়েছে চীনা বাহিনী। গত ৫ মে থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। পূর্ব লাদাখে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে প্রায় ২৫০ চীনা ও ভারতীয় সেনা। উভয়পক্ষের মধ্যে বৈঠকের পরে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও ওই ঘটনার তিন দিনের মাথায় ফের গত ৯ মে উত্তর সিকিমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শতাধিক ভারতীয় ও চীনা সেনা জওয়ান। ওই সময়েই চীনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ভারতীয় সেনা ঢুকে পড়েছিল তাদের এলাকায়। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব চীনের ওই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। সূত্র: পার্সটুডে।