আম্পান সুন্দরবন দিয়ে স্থলভাগে খুলনা যশোর দিয়ে বিদায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে ‘আম্পান’ স্থলভাগে উঠে আসে গতকাল রাতে। আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপকূল পেরিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে আম্পান স্থলভাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে। তবে একই সঙ্গে বৃষ্টি ঝরিয়ে এর শক্তি য় হয়ে যাবে। আম্পানের একটি অংশ বাংলাদেশের সাতীরা ও খুলনা অঞ্চল দিয়ে ঢুকে যশোর ও নড়াইল জেলার দিকে রাতেই চলে যাবে। এই পর্যন্ত এর বাতাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের মতো। সেখান থেকে মাগুরা, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ থেকে জামালপুরের দিকে এগিয়ে যাবে বুধবার রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। বুধবার বিকেল পাঁচটায় সুন্দরবন–সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে আম্পান। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ জানান, রাত আটটার মধ্যে আম্পান বাংলাদেশের সাতীরা, খুলনা অঞ্চল অতিক্রম করবে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। তবে ভূখণ্ডে আম্পানের স্থল নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আম্পানের নাম মুছে যাবে। পরে ময়মনসিংহ হয়ে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে গিয়ে হারিয়ে যাবে স্থল নিম্নচাপটি। এর প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি হবে। আগামীকাল শুক্রবার ২২ মে দেখা যাবে ঝলমলে রোদ। গতকাল বিকেল ৫টায় সুন্দরবন–সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে আম্পান
সাতীরা, খুলনা, যশোর হয়ে নড়াইল, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জের দিকে এগিয়ে যায় এসব জেলায় প্রবল বৃষ্টি হতে থাকে, সেই সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস সবশেষে জামালপুরের দিকে এগিয়ে যায় আজ রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে। এরপর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল হয়ে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে গিয়ে হারিয়ে যাবে। গতকাল সন্ধ্যায় সাতীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলে সাইকোন আম্পানের অগ্রভাগ ঢুকে পড়ে। খোলপেটুয়া, কপোতা, মালঞ্চ নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা ৬টায আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাতীরা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, সাতীরার সব নদ নদী সুপার সাইকোন আম্পানের অগ্রভাগে ঢুকে পড়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে। ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় নদীর পানি বেড়ে গেছে। শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, শ্যামনগরের লাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে তবে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো বেড়িবাঁধের ৪০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ এর মধ্যে পদ্মপুকুরের চালখোলা, গাবুরার লেবুবুনিয়ার, বুড়িগোয়লিনীর দাতিনাখালী, রমজাননগরের আলমশেখের বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ব্যাপক কাজ করার পরও বর্তমানে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এই বেড়িবাঁধ ভাঙলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। সুন্দরবন উপকুলের জেলেদের ট্রলার ও মাছ ধরা নৌকাকে আগেভাগেই জেলা প্রশাসন ও নৌবাহিনী সরিয়ে নিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, ঝড়ের মূল অংশ বাংলাদেশে আঘাত হানবে রাত ১১টার দিকে। তখন য়তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘আম্পান’ থাইল্যান্ডের দেওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম। ১৬ বছর আগে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) ছয়টি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সালে ৬৬টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছিল। এই তালিকার সবশেষ ঘূর্ণিঝড় হলো আম্পান। ১৬ বছরের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে আজকালের মধ্যেই। গতকাল বুধবার বিকেলে দীর্ঘ সাগরপথ পেরিয়ে আম্পান আঘাত করে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। আঘাতের সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। বৃষ্টি ঝরিয়ে ঝরিয়ে আম্পান উঠে আসতে থাকবে ভূখণ্ডে। তারপর আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। এর মিলিয়ে যাবে প্রকৃতির সঙ্গে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আম্পানের নামে প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় সাত দিন ধরে বঙ্গোপসাগর থেকে শক্তি সঞ্চয় করে নিজেকে পরিণত করেছে। তবে এর উৎসটি ছিল বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে। ১৪ মে প্রথম লঘুচাপ সৃষ্টি হয় এই সাগর অঞ্চলে। এর কয়েক দিন পর নিম্নচাপ। তারপর গভীর নিম্নচাপ। গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়। নাম হয়ে যায় ‘আম্পান’। ঘূর্ণিঝড় থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। একসময় গত ১৭ মে ‘সুপার সাইকোন’–এর পর্যায়ে চলে আসে আম্পান। উপকূল থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে থাকার সময়ই ২০০৭ সালের প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়ে শক্তি অর্জন করে আম্পান। তবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে বেশ ধীরগতিতে। উপকূলে আসার আগেই বৃষ্টি ঝরাতে থাকে। অবশেষে গতকাল বুধবার বিকেল চারটা থেকে এটি সাগর উপকূলের পূর্ব দিকে সুন্দরবন–ঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দিয়ে অতিক্রম শুরু করে।