ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন টাইফুন হ্যারিকেনের পার্থক্য

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাজানো জনপদ ধ্বংস করতে একটি ঘূর্ণিঝড়ই যথেষ্ট। একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মিশে থাকে হাজার প্রাণক্ষয়, আর্থিক ক্ষতি, পরিবেশ বিপর্যয় এবং মানুষের দীর্ঘশ্বাস! প্রলয়ঙ্কারী এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাম্য না হলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। অবাক করা বিষয় হলো, এরা একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত।
প্রশান্ত মহাসাগরের এক উপকূলে যে ঝড় ‘সাইক্লোন’ নামে পরিচিত, অন্য উপকূলে তার নাম ‘হ্যারিকেন’। কিন্তু কেন? আবার সাইক্লোনেরও কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে। সুপার সাইক্লোন এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। তাহলে সাইক্লোন এবং সুপার সাইক্লোনের মধ্যে পার্থক্যই-বা কোথায়?
সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক শব্দ কাইক্লোস থেকে। কাইক্লোস শব্দের অর্থ বৃত্ত বা চাকা। প্রাচীন গ্রিসে কুণ্ডলী বা বৃত্তাকার কিছু, বিশেষ করে সাপের কুণ্ডলী বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহার করা হতো। উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি দেখলে বোঝা যায় ঘূর্ণিঝড় অনেকটা কুণ্ডলী আকারে উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। তাই একে সাইক্লোন বলা হয়। ১৮৪৮ সালে সর্বপ্রথম হেনরি পিডিংটন নামে এক নাবিক শব্দটি ব্যবহার করেন।
সাধারণত ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে ট্রপিকাল সাইক্লোন বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাইক্লোন বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে তাকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। যদি গতিবেগ বেড়ে ৮৯ কিলোমিটারের অধিক হয় এবং তা ১১৭-এর মধ্যে থাকে তবে একে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ বেড়ে ১১৮-২১৯ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে তীব্রতর ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। এরপরের বা সাইক্লোনের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে সুপার সাইক্লোন বা মহা তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়। সুপার সাইক্লোনে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের অধিক হয়।
এবার আসা যাক হ্যারিকেন ও টাইফুনের পার্থক্যের আলোচনায়। আটলান্টিক এবং উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বিশেষ করে আমেরিকা মহাদেশ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়কে ‘হ্যারিকেন’ বলে। ক্যারিবীয় উপকথার দুষ্টু দেবতা হ্যারিকেনের নামানুসারে এই নামকরণ। হ্যারিকেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটারের অধিক হয়। হ্যারিকেন যখন ঘণ্টায় ১৮৯ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধাবিত হয় তখন তাকে ‘ইনটেন্স হ্যারিকেন’ বলে।
অন্যদিকে উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ঘূর্ণিঝড়কে ‘টাইফুন’ বলা হয়। অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ঘূর্ণিঝড়কে টাইফুন নামে ডাকা হয়। টাইফুন নামের উৎপত্তি নিয়ে দুটি ভিন্ন মত প্রচলিত। কেউ কেউ বলেন চীনা শব্দ তাইফেং থেকে এর উৎপত্তি। তাইফেং শব্দের অর্থ প্রচণ্ড বাতাস। আবার অনেকে বলেন আরবি শব্দ তুফান থেকে টাইফুনের উৎপত্তি। স্বাভাবিকভাবে টাইফুনের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার হয়। টাইফুন যখন ঘণ্টায় ২৪১ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধাবিত হয় তখন তাকে ‘সুপার টাইফুন’ বলে।
সময়ের পার্থক্য
সাইক্লোন এবং হ্যারিকেন সাধারণত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময় হয়। তবে সাইক্লোনের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাস হচ্ছে মে এবং নভেম্বর। বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর ঝড়গুলো হয় মে মাসে অথবা নভেম্বর মাসে। সর্বশেষ ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সিডর নভেম্বর মাসে হয়েছিল। অন্যদিকে টাইফুন সাধারণত জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে হয়।