বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর রেজুলেশন সর্বসম্মতভাবে গৃহীত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কোভিড -১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে তিন লাখেরও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য সম্মত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো। এ বিষয় সংক্রান্ত একটি রেজুলেশন প্রায় এক মাস ধরে আলোচনার পরে মঙ্গলবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকালে জেনেভাতে গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়াসহ প্রায় ১৩০টি দেশ ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স’ রেজুলেশনটি কো-স্পনসর করেছে অর্থাৎ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এটিকে নিজেদের বলে গ্রহণ করেছে।এই রেজুলেশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারাও বসেছে সমঝোতার টেবিলে। রেজুলশন গ্রহণের পরে সিরিয়া ও ইরান বক্তব্য দিয়ে এই রেজুলেশনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে এবং তাদের ওপর অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।
কী আছে রেজুলেশনে
এই রেজুলেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বকে স্বীকার করে নিয়ে সদস্য রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের ভিন্ন ভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলা আছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়গুলো এ রেজুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য সুলভ মূল্যে সমতার ভিত্তিতে ওষুধ বণ্টন করার বিষয়টি জোরালোভাবে বলার পাশাপাশি ট্রিপস চুক্তি ও দোহা ডিকলারেশনের কথা বলা হয়েছে এখানে। এর ফলে করোনার চিকিৎসায় নতুন ওষুধ আবিষ্কার হলে এই রেজ্যুলেশনের আওতায় বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুককারী কোম্পানিগুলো মেধাস্বত্ত বিষয়ে কোনও অর্থ ব্যয় না করে তা তৈরি করতে পারবে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য যদি কোনও দেশ কোনও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটি দূর করা হবে।
এই মহামারি ঠেকানোর জন্য দেশগুলোকে গোটা সরকারি ব্যবস্থা এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে রেজুলেশনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরোধমূলক পোশাকসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করতে হবে।আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রতিটি দেশকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে ডিজিটাল ভাবে কেউ যেন মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রদান না করে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তির কারণ অনুসন্ধান বিষয়ে
এই রেজুলেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে এই ভাইরাস কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে, কীভাবে মানুষে ছড়িয়ে পড়লো, এক বা একাধিক প্রাণীর মাধ্যমে এটি ছড়িয়েছে কিনা সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পড়ে। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পিছনে কে বা কারা দায়ী সেটি নিয়ে অনেক ’ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য জনসম্মুখে একে অপরকে দোষারোপ করেছে।এই প্রেক্ষাপটে সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।
এই গবেষণা কাজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহায়তা করবে প্রাণী স্বাস্থ্য বিশ্ব সংস্থা (ওআইই) এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফও)।
রেজুলেশনের ৯.৬ অপারেশনাল প্যারায় বলা আছে, এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে পশুর ভূমিকা কী সেটি খুঁজে বের করার জন্য মাঠ পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হবে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে এ ধরনের সার্স বা কোভিড-১৯ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর ঝুঁকি কমানো।
এ প্যারায় কোন দেশ থেকে কিভাবে এটি ছড়িয়েছে সেটি বিবেচনায় না নিয়ে ভাইরাসের মূল উৎস খুঁজে বের করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এখানে খুঁজে বের করা হবে নির্দিষ্ট কোনও প্রাণীর মাধ্যমে এ ধরনের ভাইরাস শুধুমাত্র ছড়ায় নাকি অন্য আরও প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায়।
রেজুলেশনের এই প্যারাটি বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে এবং এখানে কোনও রাজনৈতিক বিবেচনা দেখা হয়নি।