দোকান বন্ধ হওয়ায় বিপাকে দর্জির দোকানগুলো ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো কাস্টমার

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ আজ থেকে যশোরে আবারও দোকানপাট বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে দর্জির দোকানগুলো। ঈদের কাপড় হাতে না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো কাস্টমার। গত ৯ দিন শপিং মল ও ছিটকাপড়ের দোকান খোলা থাকায় কাস্টমারদের প্রচুর অর্ডার টেইলার্সদের হাতে চলে আসে। দোকান এবং টেইলার্সের শো-রুমগুলো বন্ধ থাকবে বিধায় ঈদের আগে অনেককে কাপড় তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে পোশাক তৈরি ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা তাদের শো-রম সংলগ্ন কারখানাগুলো চালু রাখার অনুমতিদানের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশের শপিং মল, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ এবং ব্যবসায়ীদের অনুরোধে সরকার সীমিত সময়ের জন্য ১০ মে থেকে দোকান খোলার অনুমতি দেয়। শর্ত থাকে দোকানগুলোতে জীবানুনাশক ¯েপ্র, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দোকান খোলা রাখা যাবে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত। ক্রেতাদেরও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে আসতে হবে। কিন্তু শপিং মল ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও সাধারণ মানুষ তা পালনে ব্যর্থ হয়। ক্রেতারা বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন কে কার আগে কাপড় কিনবেন। ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে দোকানিদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর সব চেষ্টা বিফলে যায়। এদিকে দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর থেকে যশোরে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাছাড়া শহরের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ও কোনোমতে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। ফলে জেলা প্রশাসন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আজ থেকে বাধ্য হয়ে শপিং মল ও দোকানপাট আবারও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তবে নিত্যপণ্যের দোকান ও জরুরি সেবাগুলো আগের মত খোলা থাকবে। দোকানপাট বন্ধের ফলে সবথেকে বেশি অসুবিধায় পড়েছে দর্জির দোকানগুলো। টেইলার্স মাস্টাররা বলছেন, গত ৯ দিন মার্কেট খোলা থাকায় প্রচুর কাস্টমার কাপড় তৈরি করতে দিয়েছেন। ছেলেদের, মেয়েদের ও শিশুদের পোশাক তৈরির অনেক অর্ডার তাদের হাতে । রবিবার জেলা প্রশাসনের ঘোষণার পরপরই তারা কাস্টমারদের মোবাইল ফোনে ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য আসতে বলেন। আবার যাদের কাপড় এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পরবর্তীতে দোকানপাট খুললে নিয়ে যাওয়ার আনুরোধ জানানো হয়। আর যারা কাপড় ফেরত নেবেন তারা নিয়ে যেতে পারেন। এ বিষয়ে যশোর পোশাক তৈরি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাকস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শাহজালাল লোকসমাজকে বলেন, তাদের অনেকেরই শো-রুমের সাথে কাপড় তৈরির কারখানা রয়েছে। দোকানপাট বন্ধের সাথে সাথে শো-রুমগুলোও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে কাস্টমারদের পোশাক তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হবে না। শুধুমাত্র যেসব টেইলার্সের কারখানা শো-রুমের বাইরে আছে, তারা কাস্টমারদের পোশাক তৈরি করতে পারবেন। তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তাদের শো-রুম সংলগ্ন কারখানাগুলো ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত চালু রাখার অনুমতিদানের জন্য। কথা হয় শহরের মসজিদ লেনের ‘সান টেইলার্স’ এর স্বত্বাধিকারী নিমাই দেবনাথের সাথে। তিনি শুধুমাত্র ছেলেদের পোশাক তৈরি করেন। তিনি বলেন, রবিবার প্রশাসন দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিনি তার কাস্টমারদের সাথে জরুরিভিত্তিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। যাদের কাপড় ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে, সেগুলো ডেলিভারি নিতে আসতে বলেন। আর যাদের কাপড় এখনও তৈরি করা হয়নি তাদের দোকানপাট খুললে নেওয়ার আনুরোধ জানান। আর যারা কাপড় ফেরত নিতে চাচ্ছেন তাদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার পোশাক তৈরির দোকান এইচএমএম রোডের ঝিলিক টেইলার্স, মডার্ন টেইলার্স, সাকিব অ্যান্ড বধূয়া টেইলার্স ও অঙ্গ শোভা টেইলার্স এর স্বত্বাধিকারীদের সাথে কথা হয়। এখানে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পোশাক বেশি তৈরি হয়। তারা বলেন, ঈদের আগে সবার কাপড় তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হলো না। ইতোমধ্যে যাদের কাপড় তৈরি হয়ে গেছে সেই কাস্টমারদের মোবাইল ফোনে ডেকে এনে তারা কাপড় বুঝ করে দিয়েছেন। আর যাদের কাপড় তৈরি করা সম্ভব হয়নি, তাদের পরবর্তীতে দোকান খুললে দেওয়া হবে।