যশোরে করোনা আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নিয়ে লুকোচুরি : শনাক্ত আরও একজন

0

বিএম আসাদ ॥ করোনাভাইরাসে যশোরে আরো এক নারী গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামীর সাথে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসার পর তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হলেন। এ নিয়ে যশোরে এ যাবত মোট ৯১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।
এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত সন্তান সম্ভবা মাকে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়নি। তিনি হাসপাতাল থেকেপালিয়ে গেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস ডা. মো. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগার জেনোম সেন্টার থেকে ৩টি নমুনার পরীক্ষার ফলাফল যশোর সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়। এর ভেতর দুটি রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে। ১টি ছিল নেগেটিভ। এ রিপোর্টে অভয়নগরের এক নারী নতুন করে আক্রান্ত হন। পজেটিভ অন্য রিপোর্টটি ছিল করোনায় আক্রান্ত একজনের পুনঃপরীক্ষা।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রিজভী জানিয়েছেন, আক্রান্ত ওই নারীর বয়স ৪৩ বছর। বাড়ি অভয়নগর উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামে। তার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসা করানোর জন্য ওই নারী স্বামীকে নিয়ে ভারতের কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখানে লকডাউনে পড়ে চিকিৎসা করাতে না পেরে ১৫ দিন আগে দেশে আসেন। এরপর অসুস্থ স্বামীর শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুবিধা বোধ করলে তাকে চিকিৎসার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আনা হয়। ডা. রিজভী জানিয়েছেন, হাসপাতালে আনার পর স্বামী নিতাই চন্দ্রের পরীক্ষার জন্য তিনি নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে স্বামীর সাথে থাকায় ওই নারীর ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৫ মে সংগ্রহ করা ওই নমুনা জেনোম সেন্টারে পাঠানোর পর পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। তাতে অসুস্থ স্বামী করোনামুক্ত এবং ওই নারী করোনায় আক্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। তবে স্বামীকে আবারো পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হবে বলে ডা. রিজভী জানিয়েছেন। এ নিয়ে যশোরে করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৯১ জন। গতকাল করোনা পরীক্ষার জন্য আরও ৩৬টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর ভেতর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সংগ্রহ করা নমুনা রয়েছে ২২টি।
এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনাক্ত হওয়া সন্তানসম্ভবা মাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হলেও তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে শনিবার বিকেলে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গেছে। এতে সমাজের জন্য অত্যন্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ওই প্রসূতি। গত শনিবার করোনায় আক্রান্ত বলে যে রিপোর্ট আসে, তার ভেতর একজন হচ্ছেন ওই নারী। তার বাড়ি যশোর শহরের বকচরে। ওই নারী করোনায় আক্রান্ত এ সংবাদ পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। গাইনি চিকিৎসক ডা. রবিউল ইসলাম-২ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন এবং বলেন, বারবার ডিএনসি করেছেন ওই নারী। তারপর গর্ভকালীন সময়ে করোনায় আক্রান্ত। এ পরিস্থিতিতে যশোরে তার চিকিৎসা দেয়া কষ্টকর। তাই, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। ওই রোগীটি ছিল ডা. রবিউল ইসলামের ঘনিষ্ট। এ সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় এবং আরএমও ডা. মো. আরিফ আহমেদ তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সচালক মোশারফ হোসেনকে নির্দেশ দেন এবং সবকিছু বুঝে দেন। তখন সময় দুপুর সাড়ে ১২টা। পরদিন গতকাল রোববার সকালে আরএমও ডা. আরিফ আহমেদের কাছে ওই নারীর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে রোগী পালিয়ে গেছেন। কোথায় আছে তা জানেন না। আর কিছু বলতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আরএমও এর আগেও কয়েকজন আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গেছেন।