ঈদ উপলক্ষে যশোরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের অস্বাভাবিক ভিড়

0

আকরামুজ্জামান ॥ ঈদ উপলক্ষে যশোরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অস্বাভাবিক ভিড় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য প্রতিদিনই শ শ নারী-পুরুষ ব্যাংগুলোর সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মানা হচ্ছে না। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছেন।
চারদিকে যখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। প্রশাসন যখন জনসচেতনতা বৃদ্ধি, জনসমাগম ঠেকানোসহ সামাজিক দূরত্ব নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিক এমন আতঙ্ক সময়ে যশোরের অগ্রণী ব্যাংক শেখহাটি শাখা কর্তৃক বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণে তার চিত্র ছিল উল্টো। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, ব্যাংকের নিচে ছোট্ট একটা জায়গায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক বয়স্ক নারী-পুরুষ। অথচ তাদের মধ্যে নেই কোনো নিয়ম, ছিল না সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা। অধিকাংশ মানুষের মুখে নেই কোনো মাস্ক, হাতে নেই গ্লাভস। ব্যাংকের নিচে কথা হয় অপেক্ষমান কয়েকজন মুরব্বির সাথে। তারা বলেন, সকাল থেকে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। কিন্তু এখনো ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেননি তারা। ভেতরে কাজ করা হচ্ছে শম্ভুক গতিতে যেকারণে তাদের প্রচন্ড হয়রানি হতে হচ্ছে।
আলী আহম্মদ নামে একজন সত্তোর্ধ বৃদ্ধ বলেন, বয়স্ক ভাতা নিতে সকাল থেকে এখানে এসে বসে আছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ব্যাংকের ভেতর থেকে ডাক আসেনি। কখন ডাকবে তাও জানি না। তিনি বলেন, একেতো রোজা তার ওপর এই প্রচন্ড গরম। এ অবস্থায় এখানে বসে থাকা চরম কষ্ট হচ্ছে। একই কথা বলেন, আমেনা খাতুন নামে আরেক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, করোনার কারণে ছেলেদের কাজ কর্ম বন্ধ রয়েছে। এখন এখান থেকে বিধবা ভাতা নিয়ে গিয়ে বাজার করবো। সেই সকাল থেকে বসে আছি। এখনো টাকা দেয়নি। তিনি বলেন, এই ব্যাংকে প্রতিদিন এভাবেই মানুষের ভিড় হয়। করোনা আতঙ্ক মাথায় নিয়ে ভাতা গ্রহণ করতে আসা বেশ কয়েকজন জানান, আমাদের যেভাবে ব্যাংকের লোকজন নির্দেশ দিয়েছে আমরা সেই ভাবেই তো বসে আছি। আর সামাজিক দূরত্ব কী এটা তো বুঝি না বাবা।
এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক শেখহাটি শাখা শাখার ম্যানেজার হজরত আলী বলেন, যশোর সদর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিন্ধীর মাসিক ভাতা এই শাখা থেকে দেওয়া হয়। ভাতা গ্রহণকারীদের গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকতা ভাবে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আজ (বৃহস্পতিবার) হঠাৎ করে অতিরিক্ত দুই ইউনিয়নের সুবিধাভোগীরা এসেছে তাই একটু ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, আমি নিজেই ব্যাংকের নিচে নেমে এসে বয়স্কদের মধ্যে ভাতা প্রদান করছি। মুরববি এসব মানুষদের সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু তারপরও অনেকেই তা মানছেন না। এর ফলে এসব মানুষের পাশাপাশি আমরাও অনেকটা ভয়ে ভয়ে রয়েছি। অগ্রণী ব্যাংক জোনাল শাখা যশোরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ঈদ উপলক্ষে যশোরের ব্যাংগুলোতে গ্রাহকদের চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। এ কারণে আমাদের কয়েকটি ব্র্যাঞ্চে চাপ বেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু অগ্রণী ব্যাংক নয়, সোনালী ব্যাংক কর্পোারেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংক মাইকপট্টি শাখা, এইচএমএম রোডস্থ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও প্রধান ডাকঘরের সামনে শ শ মানুুষের ভিড়। কোথাও কোথাও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের একে দেওয়া সীমারেখার মধ্যে দাঁড়িয়ে গ্রাহকরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন। প্রখর রোদে গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। যেকারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আমরা কঠোর হচ্ছি। তিনি বলেন, আমার ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব থেকে ব্যাংকে প্রবেশ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার সামনে কয়েকজন গ্রাহক বলেন, এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যাংকে প্রবেশের কথা বলা হলেও অনেকে তা মানছেন না। যেকারণে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোর।