বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে মতৈক্য, সুবিধা পাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ, সর্বোপরি বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনে মতৈক্যে পৌঁছেছে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলো। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তাবিত রেজুলেশনটির ওপর প্রায় এক মাস ধরে আলোচনা ও দরকষাকষির পর মঙ্গলবার রাতে (১২ মে) রাষ্ট্রগুলো একমত পোষণ করে আলোচনা শেষ করেছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আশা করা হচ্ছে আগামী ১৮-১৯ মে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে (ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি) এটি গৃহীত হবে। সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শামীম আহসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি দল এ আলোচনায় অংশ নেয় এবং দরকষাকষির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জানা গেছে, এ বিষয়ে আলোচনার শুরু থেকে উন্নয়নশীল ও উন্নত বিশ্ব এবং এমনকি উন্নত বিশ্বের নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু অবশেষে এই রেজুলেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সব পক্ষ নিজেদের মতবিরোধ ভুলে সমঝোতা করেছে। এ বিষয়ে দরকষাকষিতে অভিজ্ঞ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মধ্যে আছে এবং এরমধ্যে এই সমঝোতা এটিই প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এখনও জোরালো প্রয়োজন আছে।’ এই রেজুলেশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নেতৃত্বের আসন দিয়েছে এবং এ সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোভিড-১৯ মোকাবিলা করবে বলে তিনি জানান।
রেজুলেশনের খসড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের জন্য যে তিনটি বিষয় সবচেয়ে উদ্বেগের ছিল, সেগুলোর বিষয়ে এই রেজুলেশন সমাধান দিয়েছে।’ এই তিনটি বিষয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত দাম। ওষুধ ও চিকিৎসা পণ্যসামগ্রীর দাম সুলভ করা। অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশের গরিব মানুষরা যাতে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে পারে, দ্বিতীয়ত চিকিৎসা সামগ্রী সমতার ভিত্তিতে বণ্টন এবং সমানাধিকার (এফোর্ডাবিলিটি, ইক্যুয়িটি ও এক্সেস)। এ তিনটি বিষয় রেজুলেশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে বলে তিনি জানান। সাবেক সচিব বলেন, ‘এখানে সামগ্রী ছাড়াও প্রযুক্তি বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশের জন্য ছাড় আছে এবং গোটা বিষয়টি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসাবে দেখা হবে। এছাড়া এই বিধানগুলো সম্পাদনে যদি কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে তা দূর করার জন্য বলা হয়েছে।’ শুধু তা-ই নয়, মহামারি মোকাবিলার জন্য উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে বলেও জানান শহীদুল। রেজুলেশনে কোভিড-১৯ মোকাবিলার প্রাথমিক দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শহীদুল বলেন, ‘সরকারি খাতকে সমস্যা সমাধানে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং বেসরকারি খাতকে সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।’
কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য তহবিল সংগ্রহের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সাবেক সচিব বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য ভালো আছে কিনা, স্বাধীন, নিরপেক্ষভাবে তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করবে সদস্য রাষ্ট্ররা।’ কিন্তু, অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের বিষয়ে সরাসরি এখানে বলা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এটির জন্য চেষ্টা করলেও বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই অনেকে এটির অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে।’ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কৌশলগত রেসপন্স পরিকল্পনা ও কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মানবিক রেসপন্স পরিকল্পনার মধ্যে পরোক্ষভাবে অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের কথা বলা আছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিদেশে বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছে এবং কক্সবাজারে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।