‘কোভিড-১৯ রেসপন্স রেজুলেশন বাংলাদেশের জন্য সুযোগ’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স’ রেজুলেশন আগামী ১৮-১৯ মে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি হবে। তবে এজন্য সক্ষমতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান। ওই রেজুলেশন নিয়ে দর কষাকষিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া শামীম আহসান জেনেভা থেকে ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই রেজুলেশনের কারণে আমাদের সামনে সুযোগ তৈরি হবে। এই সুযোগ আমাদেরই কাজে লাগাতে হবে। সক্ষমতা একদিনে তৈরি হয় না কিন্তু এর পেছনে লেগে থাকতে হবে।’
এই রেজুলেশনের বাণিজ্যিক সুযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অনেকে মনে করতে পারে এখন মেডিক্যাল সামগ্রীর চাহিদা বাড়বে এবং আমরা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবো। কিন্তু এ ধরনের সুযোগ বাস্তবতায় পরিণত করতে গেলে যে সক্ষমতা লাগে, আমাদের তা আছে কিনা সেটা বড় প্রশ্ন।’ নিজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের এক বড় ক্রেতা আমাদের সঙ্গে নিজে যোগাযোগ করে জানিয়েছে তারা বড় মাপের একটি অর্ডার দিতে চায় এবং তাদের সঙ্গে আমি বিজিএমইএ-এর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সুযোগ সব সময় থাকে কিন্তু সেটিকে কাজে লাগানো বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের সক্ষমতা ও প্রস্তুতির বিষয়টি জরুরি।’
দর কষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থান
শামীম আহসান বলেন, রেজুলেশন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। এখন এটি যে পর্যায়ে আছে তাতে বলা যায় যে মোটামুটি সবাই গ্রহণ করতে পারে। তবে প্রথম ড্রাফটের (জিরো ড্রাফট) সঙ্গে বর্তমান ড্রাফটের অনেক পার্থক্য জানিয়ে শামীম বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। এর প্রতিটি ধাপে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমরা বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য সংযোজন বা বিয়োজনের চেষ্টা করেছি।’ শামীম আহসান বলেন, ‘প্রথম ড্রাফটের ওপর দর কষাকষি শুরু হওয়ার পরে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি পরিবর্তন আনার জন্য বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে। আমাদের মূল যে উদ্বেগের বিষয়গুলি ছিল সেটি দূর করার জন্য আমরা টেক্সট পরিবর্তন করতে পেরেছি।’
রেজুলেশন নিয়ে দর কষাকষিতে বাংলাদেশ কী কী বিষয় বিবেচনা করেছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যখন কোনও রেজুলেশন নিয়ে আলোচনা হয় তখন প্রথম বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে কারা এটি নিয়ে এসেছে। এখানে রেজুলেশনটি নিয়ে এসেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে তারা একমত হয় না। ওই সব বিষয়ে কিছু ঘাটতি থাকবে তাদের টেক্সটে, এটিই স্বাভাবিক। প্রথমে এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই টেক্সটটি পড়েছি। যখন আমরা দেখলাম যে কয়েকটি জায়গায় ঘাটতি আছে তখন আমরা আমাদের কৌশল ঠিক করি। তিনি বলেন, ‘ওষুধের ওপর অধিকারের বিষয়টি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো সবসময়ে সমতার ভিত্তিতে বিবেচনা করে থাকে। যখন একটি নতুন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বের হয় তখন তার ওপর সবার অধিকার আছে এভাবে আমরা জিনিসটা দেখি।’ সুলভ মূল্য, ওষুধে অধিকার, সমতা, নিম্ন আয়ের দেশের জন্য বিশেষ সুবিধার বিষয়গুলি অনেকে মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতে চায় না জানিয়ে শামীম আহসান বলেন, ‘এই বিষয়গুলো আমরা প্রথম থেকেই চিহ্নিত করেছি, এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছি এবং স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশও এটিকে সমর্থন দিয়েছে। পরবর্তীতে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
বাস্তবায়ন
রেজুলেশন গ্রহণের পরে এটি বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান। তিনি বলেন, ‘এই রেজুলেশনে যা বলা আছে তার অনেক কিছুই আমরা জানতাম। যেমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু আমরা কি এটি করতে পারি বা পেরেছি? জাতীয় পর্যায়ে এটি কিভাবে দেশগুলো বাস্তবায়ন করবে এটি বলা মুশকিল। তবে এই ধরনের রেজুলেশন কেউ বাস্তবায়ন করে না এটাও আবার ঠিক না।’ অনেক রাষ্ট্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ সংস্থানের অজুহাত দেখায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ থেকে সবার বোঝা উচিৎ অগ্রাধিকারের বিষয় কোনটি। যেসব দেশের বাজেটে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় ওইসব দেশের ক্ষেত্রে এই অজুহাত ধোপে টিকবে না।’ ইউরোপের দেশগুলো, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও অনেক দেশ রেজুলেশনটি যৌথভাবে কো-স্পনসর করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড় উদ্বেগগুলো নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়া এই রেজুলেশনে বাংলাদেশ কো-স্পনসর হবে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটির কো-স্পনসর হওয়ার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা নেই।’