পরিবারের অভিযোগ ‘হত্যা’ : যশোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৩ মামলার আসামি বাবু নিহত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৩ মামলার আসামি মাহমুদ হাসান বাবু ওরফে ট্যারা বাবু (৪০) নিহত হয়েছেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের সাড়াপোল কলাবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাহমুদ হাসান বাবু সদর উপজেলার কৃষ্ণবাটি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। অপরদিকে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বাবুকে হত্যা করিয়েছে। তারা এ জন্য ওই মাদক ব্যবসায়ীদের আটক ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তবে পুলিশ তাদের এ দাবি অস্বীকার করেছে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, গত সোমবার গভীর রাতে পুলিশ খবর পায় সাড়াপোল কলাবাগ মোড় সংলগ্ন বকুলনগরগামী রাস্তার পাশের কালভার্টের কাছে কতিপয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী মাদকদ্রব্য বেচাকেনার জন্য অবস্থান করছেন। এ খবর পেয়ে চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশের এসআই শাহিদুল ইসলাম ফোর্স নিয়ে রাত সোয়া একটার দিকে সেখানে অভিযান চালান। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জন সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। জবাবে পুলিশ শর্টগান দিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ করলে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে যান। পরে সেখান থেকে অজ্ঞাতনামা এক সন্ত্রাসীকে গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শ্যুটারগান, বন্দুকের কার্তুজের ৬টি খোসা, ২শ’ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি কৃষ্ণবাটি গ্রামের বাবু। তার বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালি থানায় ৩টি হত্যা মামলা, অস্ত্র আইনের ২টি মামলা এবং বিস্ফোরকদ্রব্য উপাদানাবলী আইনের ৪টি মামলাসহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানায় তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আরো একটি মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, বন্দুকযুদ্ধে মাহমুদ হাসান বাবু নিহত এবং অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধরের ঘটনায় এসআই শাহিদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। হত্যা, অস্ত্র আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এসব মামলা করা হয়।
এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, বাবু সদর উপজেলার মন্ডলগাতি গ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হেমায়েত হত্যা মামলার আসামি। তার ভাই মনা একই মামলার আসামি। হেমায়েত খুনের পর পুলিশ মনাকে আটক করেছিলো। কয়েক বছর আগে জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর গেটের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান হেমায়েত। অপরদিকে নিহত মাহমুদ হাসান বাবুর বোন রুপা বেগম জানান, তার ভাই বাবু এক সময় মাদকের ব্যবসা করতো এটা সত্য। কিন্তু তিনি অনেক আগে ভালো হয়ে গেছেন। বছর খানেক আগে শহরের রেলগেটের মাদক ব্যবসায়ী কুদরত তার ভাইকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছিলেন। সেই থেকে তার ভাই কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি অভিযোগ করেন, তার ভাই এলাকার মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করতেন। শাহারুল চেয়ারম্যানকে খবর জানিয়ে দিতেন। এ কারণে মন্ডলগাতি, পুলেরহাট ও কৃষ্ণবাটি এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা তার ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন পুলেরহাটের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাফিজুর রহমান, রেলগেটের কুদরত, চাঁচড়া রায়পাড়ার এক সময়ের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী তারেকের ছেলে ইমন (বর্তমানে তফসিডাঙ্গায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস), মন্ডলগাতির মনির হোসেনের দুই ছেলে হিল্লোল ও বিল্লাল। এরা যোগসাজসে পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তার ভাইকে হত্যা করিয়েছেন। মাহমুদ হাসান বাবুর ভাগ্নে পুলেরহাটের বাসিন্দা সুজন হোসেনের অভিযোগ, গত ১০ মে সন্ধ্যায় মাদক ব্যবসায়ী হাফিজুর তার মামাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে তার মামা নিখোঁজ ছিলেন। তিনি বলেন, হাফিজুর ৯ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করেছেন। এই ৯ লাখ টাকা পুলিশকে দিয়ে হাফিজুরসহ অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা তার মামাকে হত্যা করিয়েছেন। এ কারণে তারা ওইসব মাদক ব্যবসায়ীকে আটক এবং তার মামার হত্যার বিচার চান। এদিকে চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ ইনসপেক্টর শাহাজান আহমেদ স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এসব সত্য নয়। তিনি এ বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে কোতয়ালি থানায় কথা বলতে বলেন।