করোনায় দুর্নীতির শীর্ষে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ

0

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি॥ নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার গ্যাড়াকলে গ্রাহক ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি নিত্য সঙ্গী হয়ে আছে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা ভালো হলেও প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঊর্দ্ধে থেকে বছরের পর বছর মনগড়া ভৌতিক বিল করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এমনকি করোনা সংক্রমণকালে গ্রাহকের স্বার্থে দেওয়া সরকারি নির্দেশও মানছে না তারা। তবে বিল বিভ্রাটের সত্যতা স্বীকার করে পরবর্তী মাসে তা ঠিক করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যদিও বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না কোনো গ্রাহক। মিরপুর উপজেলার মাশান গ্রামের কৃষি মজুর আবাসিক গ্রাহক আসান আলীর অভিযোগ, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে তার বিল যোগ করে তিন ভাগ করলে গড় বিল হয় ৩৫১ টাকা অথচ এপ্রিল মাসে অফিসে বসে গড় বিলের নামে তার বিল করে দিয়েছে ৫৭৩ টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ একবার যে বিলের বোঝা গ্রাহকের ঘাড়ে চাপায় তা আদায় করেই ছাড়ে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রামের গ্রাহক স্কুলশিক্ষক আবুল খায়ের বলেন, ‘‘একদিকে করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন বা সাধারণ ছুটিতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। ঘরবন্দি মানুষের আর্থিক ও খাদ্য সঙ্কটে জীবন-জীবিকা হুমকীর মুখে। তার মধ‌্যে বিদ্যুৎ বিলে বিলম্ব মাসুল মওকুফসহ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে সরকারি নির্দেশনাও মানছেন না কুষ্টিয়া পল্লী বিদ‌্যুৎ সমিতি। ‘গড়বিলের কথা বলে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি ভৌতিক বিলের বোঝা গ্রাহকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ। সময়মতো বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলেই লাইন কেটে দেবে। আবার সংযোগ দেওয়ার সময় গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির সাথে ভোগান্তিও রয়েছে।” মিরপুর উপজেলার সদরপুর এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে বাড়ি আসবে না বলে মিটার না দেখে বিল করেছে পল্লী বিদ্যুৎ। তবে বিলের কাগজ ঠিকই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করেছে। এটা একটা ধোঁকাবাজি। গড় বিলের নামে ডবল বিল করেছে।’
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিল কালেকশন বুথের ক্যাশিয়ার তপতী রানী বিশ্বাস জানান, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে এই গড় বিল করা হয়েছে। তবে প্রস্তুতকৃত বিল শুধুমাত্র বেশিই হয়েছে, কম হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া এসব ভুতুড়ে বিল সংশোধন করতে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে এসেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। সমিতির ভুল হওয়া সত্ত্বেও ডুবলিকেট ফি বাবদ গ্রাহকের টাকাই কেটে নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে অদৃশ্য কারণে ডিমান্ড চার্জের নামেও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। গ্রাহকদের বছরের পর বছর মিটার ভাড়াও দেওয়া লাগে এমন অভিযোগের পাহাড় রয়েছে এ সমিতির বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সভাপতি রেজওয়ান আলী বলেন, ‘এজাতীয় সমস্যা এর আগেও হয়েছে। সংক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা হাইকোর্টে মামলাও করেছেন। কিন্তু প্রতিকার হয়নি।’ বিলিং সেকশন বা ফাইনান্স বিভাগের কর্মীরা অতিরিক্ত কাজের চাপ সামাল দিতে নির্ধারিত সময়ের অধিক সময় কাজ করতে হয় এবং প্রায় চার লাখ ৮০ হাজার গ্রাহকের বিলিং সেবা দিতে গিয়ে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে বলে জানান রেজওয়ান আলী। কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সোহরাব আলী বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘করোনাকালে সরকারী নির্দেশনায় গড় বিল করা হয়েছে। অতিরিক্ত বিলের সমস্যা যাদের হয়েছে তাদের বলেছি; ধৈর্য ধরুন পরবর্তী মাসের বিলের সাথে সমন্বয় করে দেওয়া হবে।’ তবে ভৌতিক বিল করে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।