চাঙ্গার পথে কানাডার গম উৎপাদন বাড়তে পারে রফতানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা জটিলতায় ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে (আগস্ট-জুলাই) কানাডার গম উৎপাদনে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। তবে ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব ফিরতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস। আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি ও পরিত্যক্ত জমি হ্রাস এক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। আগামী বিপণন বর্ষে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদনে চলতি বর্ষের তুলনায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম ও এগ্রিমানি।
ইউএসডিএর সাম্প্রতিক প্রকাশিত ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে কানাডাজুড়ে মোট ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে, চলতি বিপণন বর্ষের তুলনায় যা ২ শতাংশ বেশি। আর চলতি ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ২৩ লাখ টন গম উৎপাদনের প্রাক্কলন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন বাড়তে পারে ১৫ লাখ টন।
২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে কানাডার গম উৎপাদনে মন্দা ভাবের পেছনে প্রতিকূল আবহাওয়া সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া পরিবহন খাতের চ্যালেঞ্জ, বাজার এক্সেস ইস্যু এবং সাম্প্রতিক সময়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পণ্যটির উৎপাদন খাতে অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে পরের বিপণন বর্ষে দেশটির গম উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করলেও পরের তিনটা সমস্যা খাতটি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। বিশেষত নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর পণ্যটি সরবরাহ ও চাহিদার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ব বাণিজ্য শৃঙ্খল এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে লকডাউনসহ বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাগুলো পণ্য বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কৃষি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। কৃষিপণ্যের স্বাভাবিক পরিবহন ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে শ্রম সরবরাহে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে দেশে দেশে খাদ্য নিরাপত্তার আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কানাডার অভ্যন্তরীণ বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদে গমের চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা পণ্যটির দামে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক মহামারীর পর থেকে অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে চলতি বিপণন বর্ষে কানাডা থেকে গমের রফতানি কমে যেতে পারে। এ সময় দেশটি থেকে সব মিলিয়ে ২ কোটি ২২ লাখ টন আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হতে পারে, আগের বিপণন বর্ষের তুলনায় যা ৯ শতাংশ কম। তবে বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ায় পরের বিপণন বর্ষে দেশটি থেকে কৃষিপণ্যটির রফতানি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠতে পারে। ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি ৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ।
গম উৎপাদনের বৈশ্বিক তালিকায় কানাডার অবস্থান ষষ্ঠ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর দেশটি থেকে প্রচুর গম আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে কানাডায় গমের অভ্যন্তরীণ চাহিদা আগের বর্ষের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৬ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। তবে পরের বছর পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যেতে পারে। ইউএসডিএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে কানাডায় গমের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৮ শতাংশ কমে ৯৭ লাখ টনে নামতে পারে। পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হ্রাস এ সময় সামগ্রিকভাবে পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদায় প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে গমের সঙ্গে সঙ্গে ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে কানাডার ভুট্টা উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে। যদিও চলতি বিপণন বর্ষে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে দেশটিতে ভুট্টার উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৩৪ লাখ টনে, আগের বিপণন বর্ষের তুলনায় যা ৪ শতাংশ কম। আবাদ কমে যাওয়া এ সময় কৃষিপণ্যটির উৎপাদন হ্রাসে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন চার লাখ টন বেড়ে ১ কোটি ৩৮ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে।
চলতি ও আগামী উভয় বিপণন বর্ষে কানাডা থেকে ভুট্টা রফতানিতে মন্দা ভাব বজায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস কৃষিপণ্যটির রফতানি হ্রাসের জন্য মূল ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বিপণন বর্ষে দেশটি থেকে ভুট্টার রফতানি কমে ১১ লাখ টনে নামতে পারে, আগের বর্ষের তুলনায় যা ৩৯ শতাংশ কম। পরের বিপণন বর্ষে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি আরো কমে ১০ লাখ টনে নেমে যেতে পারে। ইউএসডিএর এ পূর্বাভাস সত্য হলে তা হবে গত ছয় বছরের মধ্যে কানাডা থেকে কৃষিপণ্যটির সর্বনিম্ন রফতানি।
এদিকে চলতি বিপণন বর্ষে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভুট্টার ব্যবহার কমে যেতে পারে। পশুখাদ্য ও ইথানল উৎপাদন উভয় খাতে পণ্যটির ব্যবহার হ্রাসে সামগ্রিকভাবে অভ্যন্তরীণ ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারে। ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে দেশটিতে ভুট্টার অভ্যন্তরীণ ব্যবহার কমে ১ কোটি ৩৫ লাখ টনে নামতে পারে, আগের বিপণন বর্ষের তুলনায় যা ১৩ শতাংশ কম। তবে পরের বছর কৃষিপণ্যটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।