বাজারে ঈদের কেনাকাটায় মানুষের ঢল

0

আকরামুজ্জামান ॥ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়ার পর গতকাল প্রথমদিন যশোর শহরের দোকান ও মার্কেটগুলোতে মানুষের ঢল নামে। এতে শহরের যানজটও দেখা দেয়। বিশেষ করে পোশাকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বেশি উপস্থিতি ল করা গেছে। যশোর শহরের জেলা জজ কোর্ট মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও বড়বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। এসব দোকানে সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। বেশির ভাগ দোকানে দেখা গেছে ক্রেতা ও বিক্রেতা মাস্ক ব্যবহার করলেও তারা কেউই গ্লাভস ব্যবহার না করেই পোশাক হাতে নিয়ে দেখছেন। মূলত ঈদ বাজারেই ক্রেতার সমাগম ঘটে।
রোববার সকাল থেকেই যশোর শহরের এইচএম রোডের কাপুড়িয়াপট্টি, কালেক্টরেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ যশোর শহরের অন্যান্য দোকান ও মার্কেটগুলোতে মানুষের ঢল নামে। এতে শহরের যানজটও দেখা দেয়। বিশেষ করে পোশাকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বেশি উপস্থিতি ল করা যায়। যশোর শহরের জেলা জজ কোর্ট মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও বড়বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মানুষের ভিড়ের কারণে পা ফেলার কোনো উপায় ছিলোনা। এসব দোকানে সঠিকভাবে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। বেশির ভাগ দোকানে দেখা গেছে ক্রেতা ও বিক্রেতা মাস্ক ব্যবহার করলেও তারা কেউই গ্লাভস ব্যবহার না করেই পোশাক হাতে নিয়ে দেখছেন। এতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেয় অনেকের মাঝে।
মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের লাইনে অন্যান্য বয়সের মানুষের পাশাপাশি বয়স্ক ও শিশুরাও রয়েছে। এসব শিশুরা মা-বাবার হাত ধরে ঈদের বাজারে এসেছে। তাদের মুখে নেই মাস্ক, হাতে নেই গ্লাভস। যে যার মতো পুরো বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ এসব মানুষকে নিয়ন্ত্রনে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই লক্ষ্য করা যায়ানি। আলাউদ্দীন মন্ডল নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রথম দিন বাজার খুলছে বলে মনে করে সকালেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। কিন্তু বাজারে এসে এমন ভিড় হবে তা আগে জানতাম না। তিনি বলেন, ভয় লাগছে, মনে হচ্ছে টাইম বোমার ওপর দাঁড়িয়ে আছি। কেনাকাটা করে বের হয়ে যেতে পারলে বাঁচি। তিনি বলেন, বাজারে যখন এসেছি, তখন সব কিছুই আজই কিনে নিয়ে যাবো। একই কথা বলেন শিউলী আক্তার নামে আরেকজন ক্রেতা। তিনি বলেন, অনেকদিন পর দোকান খুললো। ভয় লাগলেও প্রথম দিনেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে মার্কেটে এসেছি। যাতে কিছুটা নিরাপদ থাকা যায়। তবে গ্লাভস না পরে এসে ভুল করেছি। ভবিষ্যতে আর বাজারে আসার কোনো চিন্তা নেই।
এইচএমএম রোডের ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি দোকানেই মানুষের ভিড়ে পা ফেলার কোনো জায়গা নেই। কিছু কিছু দোকানের গেটে জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু এসব কেউই ব্যবহার করছেন না। দোকানে মধ্যে ঠেলাঠেলি করে ঢুকছে সবাই। আবার দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা ক্রেতাদের কাপড়-চোপড় দেখালেও তাদের অনেকের হাতে নেই গ্লাভস। রবিউল ইসলাম নামে একজন দোকানী বলেন, সকাল থেকে হাতে গ্লাভস পরে বেচাকেনা করলেও এখন গরম লেগে যাওয়া খুলে রেখেছি। বাজারগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেলেও শহরে এইচএমএম রোড, মুজিব সড়ক এলাকার অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ছিলো উল্টো চিত্র। শপিংমলগুলোতে প্রবেশের আগেই মার্কেটের কর্মীরা জীবাণুনাশক দিয়ে ক্রেতাদের হাত ও পা ভিজিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া দোকানগুলোতে কর্মীরা মাস্ক, গ্লাভস ও মাথায় টুপি পরে ক্রেতাদের সামনে পোশাক উপস্থাপন করছেন। আর পোশাকে হাত দেওয়ার আগে ক্রেতাদের হাতে আবারও জীবাণুনাশক দেওয়া হচ্ছে। মার্কেট মালিকদের দাবি, দোকানিরা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তারা মার্কেট বন্ধ করে দেবেন।
যশোর সিটি প্লাজা মার্কেটের মালিক ইয়াকুব আলী বলেন, মার্কেটের দোকান মালিকদের নিয়ে ৯ মে সভা করেছি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার আশ্বাস দিয়েছেন এবং সেই মতো কাজ করেছেন। সকালে দোকানে দোকানে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মার্কেটের একটি প্রবেশদ্বার করা হয়েছে। যেখানে একাধিক কর্মী দিয়ে ক্রেতাদের হাতে ও পায়ে জীবাণুনাশক দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কোনও ক্রেতাকে মার্কেটে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একই কথা বলেন, ছিট কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও এইচএমএম কথের স্বত্তাধিকারী আবু হোসেন। তিনি বলেন, রোববার জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে আমরা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনার জন্য। এজন্য প্রতিটি দোকানের সামনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জামও রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ক্রেতাদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে বলছি। বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকেলে কথা হয় যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফের সাথে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আমাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছি। তারপরও অনেকে এটি মানছেন না। এটি খুবই দু:খজনক। তিনি বলেন, সীমিত পরিসরে বাজার খুলে দেওয়ার প্রথম দিনে যশোরের বাজারে মানুষের ভীড়ের বিষয়টি আমি জেনেছি। এজন্য আমরা মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরপরও কেউ যদি না মানে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।