করোনার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোংলা বন্দর আগমন-নির্গমণ বাণিজ্য

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট)॥ দেশে করোনা প্রার্দুভাবের প্রথম দিকে জাহাজ আগমন ও পণ্য খালাস বোঝাই কাজ কিছুটা কমে গেলেও এখন সব ধকল সামলে ঘুঁরে দাঁড়িয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর। স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরে জাহাজ আগমন-নির্গমণসহ পণ্য আমদানী ও রফতানী বাণিজ্য। বন্দরে বিরাজ করছে কর্ম চাঞ্চল্যতার। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি অর্থ বছরে গত বছরের মতো এবারও এ বন্দরের আয় সাড়ে ৩ শ’ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশাবাদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর ও ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের বিরুপ প্রভাব পড়েছে আর্ন্তজাতিক বাজারে। বিশ্ব ব্যাপী আমদানী-রফতানী বানিজ্যে মন্দা দেখা দিয়েছে। আর নিয়ে এখনও নানা শংকার মধ্যে রয়েছেন মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী আমদানী-রফতানীকারকরা। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ভাবে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও ব্যবসা বাণিজ্যর পরিধি সীমিত করায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। দেশে করোনার প্রার্দুভাবের প্রথম দিকে এ বন্দরে জাহাজ আগমন ও পণ্য খালাস বোঝাই কাজে কিছুটা প্রভাব পড়লেও ধীরে ধীরে তা কেটে গিয়ে বন্দর বর্তমানে কর্ম চঞ্চল হয়ে পড়েছে। সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় এখনও স্বাভাবিক রয়েছে বন্দর। এ বন্দরে এখন গড়ে প্রতিদিন ১০/১১টি জাহাজের অবস্থান থাকছে।
বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, করোনার প্রার্দুভাব দেখা দেয়ার পরও চলতি অর্থ বছরের জানুয়ারীতে ১শ’টি জাহাজ ভেড়ে বন্দরে আর ১২ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন আমদানি ও ১৪ হাজার ২শ’৩৬ টন পণ্য এ বন্দর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানী হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসে ৭০টি জাহাজ আসে বন্দরে আর ৯ লাখ ৫১ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন পণ্য আমদানী ও রফতানি হয় ১১ হাজার ৫শ’ ৩৯ মেট্রিক টন পণ্য। গত মার্চ মাসে ৭৩ টি পণ্যবাহী বানিজ্যিক জাহাজ ভেড়ে আর ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৬শ’৪৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও ৭ হাজার ৬শ’২১ মেট্রিক টন পণ্য বিদেশে রফতানি হয়েছে। গেল এপ্রিল মাসেও ৭১টি দেশী-বিদেশী বানিজ্যক জাহাজের আগমন ও নির্ঘমন সহ ৮ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন সার, গম, কয়লা, কিংকার, সিরামিক সহ কন্টেইনারজাত নানা পণ্য আমাদানী হয় এ বন্দরে। একই সঙ্গে হিমায়িত চিংড়ি ও পাটজাতসহ বিভিন্ন পণ্য বিশ্ব বাজারে রফতানী হয়েছে ৭শ’১৯ মেট্রিক টন। এ ছাড়া চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরে রিকন্ডিশন গাড়ী আমাদনী হয়েছে ১১ হাজার ৭শ’৪৭টি। কিন্ত আমাদনীর ক্ষেত্রে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে কন্টেইনারজাত পণ্য, রিকন্ডিশন গাড়ী ও মেজিনারীজ সহ অন্য পণ্য সামগ্রী।
সূত্র আরো জানায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের (২০১৯-২০২০) এ পর্যন্ত মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৯৯ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমাদনী ও রফতানী হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্দরের আয় হয়েছে ২শ’৮৩ কোটি টাকা। আর গত অর্থ বছর (২০১৮-২০১৯) আমদানী-রফতানির পরিমান ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন পণ্য। রিকন্ডিশন গাড়ী আমদানী হয়েছিল ১২ হাজার ৬শ’৯৫টি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিকমোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, গেল অর্থ বছরে বন্দরের আয় হয়েছিল ৩শ’২৯ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থ বছর শেষ হতে আরও দু’মাস বাকী রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বন্দরে আমাদানী-রফতানী এবং আয় গত অর্থ বছরের কাছাকাছি পৌছাতে সক্ষম হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বন্দর জেটিতে আমদানী ও রফতানী পণ্যসহ ৩ হাজার ৯০ একক কন্টেইনার রয়েছে। তবে কন্টেইনার নিয়ে বন্দরে তেমন সমস্য না থাকলেও রিকন্ডিশন গাড়ীর ধারন ক্ষমতা এখন ছুই ছুই। তাই দ্রুত গাড়ী ছাড় নিতে ইতিমধ্যে আমদানীকারকদের তাগিদ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ সুলতান আহম্মেদ বলেন, বন্দরে বাল্ক কার্গো (খোলা পণ্য) জাহাজের সংখ্যা ও পণ্য আমদানী বাড়লেও কন্টেইনার জাহাজের সংখ্যা কমে গেছে। তাই কন্টেইনারজাত পণ্য রফতানিতে বিড়ম্বনা সহ আর্ন্তজাতিক বাজারেও দেশীয় পণ্যের শিপমেন্ট আগের চেয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া এই লক ডাউনের মধ্যে তাদের ডকুমেন্ট ,ব্যাংক কিয়ারেন্স আনা সম্ভব হয়নি। তেমনি তাদের কোম্পানী ও শোরুম গুলো লকডাউন। পাশাপাশি পরিবহন চলা চলে নিয়ন্ত্রন সবমিলিয়ে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হলে তাদের অনেককে পথে বসতে হতে হবে । তাই এ ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে কিছুটা হলেও সুযোগ সুবিধা পেতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লি: এর সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন- করোনা বিস্তার প্রতিরোধে সরকার ২৭ মার্চ হতে চট্রগ্রাম বন্দরে অবতরন কৃত কন্টেইনার ৪ মে’র মধ্যে ডেলিভেরী গ্রহন করলে শতভাগ ষ্টোরেন্ট মওকুপ করেছে বন্দর কতৃপক্ষ । অন্যদিকে মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও সুবিধা পায়নি ব্যাবসায়ির।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও কন্টেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানীকারক মোঃ কবির জানান, করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে কন্টেইনারে পণ্য আমদানীতে কিছু সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। তবে সংকটের মধ্যেও তারা পণ্যবাহী কন্টেইনার আমদানী অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, করোনার প্রভাব আরও দীর্ঘয়ায়িত হলে তাদের ক্ষতির পরিমান ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর কখনই এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না তারা। তারা ব্যবসায়ীদের প্রতি বন্দরের আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিষয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, চট্রগ্রাম বন্দরে প্রথম ৪দিন কোন রেন্ট নেই। সেখানে মোংলা বন্দরে ৭ দিন কোন রেন্ট নেই । ২০ ফিট ও ৪০ ফিট কন্টেইনার চট্রগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন রেন্ট ৬ ও ১২ ডলার। আর মোংলা বন্দরে প্রতিদিন রেন্ট ৩ ও ৬ ডলার । এছাড়া চট্রগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার জট দুটোই আছে। সেখানে মোংলা বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনারের কোন জট নেই ৪০ ভাগ ফাঁকা রয়েছে। এ কারণে মোংলা বন্দর কতৃপক্ষ কন্টেইনার ষ্টোরেন্ট ভাড়া মওকুফের বিষয়টি ভাবছেন না । লক ডাউনের মধ্যেও তারা দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছেন এবং সব মিলিয়েবন্দরের সক্ষমতা এখনও আর ৫০ শতাংশ রয়েছে।