করোনা : যবিপ্রবির ফলে অসন্তোষ যশোরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা পরীার ফলাফলে স্পষ্টতই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন স্বাস্থ্য বিভাগের জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তাদের কেউ কেউ যবিপ্রবি জেনোম সেন্টারে নমুনা পরীার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলেন। তবে সভায় উপস্থিত মন্ত্রিসভার একজন সদস্য বলেন, যবিপ্রবি ল্যাবে নমুনা পরীা বন্ধ নয়, যদি কোনো সমস্যা থেকেও থাকে তাহলে তা সমাধানের পথ বের করতে হবে। তিনি স্বাস্থ্য সচিবকে একটি এক্সপার্ট টিম যশোরে পাঠানোর অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী কয়েকদিনের মধ্যে একটি টিম যশোর আসতে পারে বলেও সভায় অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এই বিষয়টি আলোচনা হয়। সভায় হাজির ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলামও। সভা শেষে অংশগ্রহণকারীদের অন্তত চারজন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এমন এক সময় এই বিষয়টি উঠলো, যখন যবিপ্রবি ও খুলনা মেডিকেল কলেজের নমুনা পরীার ফলাফলে আকাশ-পাতাল ব্যবধান নিয়ে যশোরে জোর আলোচনা চলছে। সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা পরীা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যেকার মতানৈক্যের বিষয়টিও অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
পরে যোগাযোগ করা হলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট অণুজীববিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন তার প্রতিষ্ঠানের ল্যাব পরিদর্শনে যেকোনো টিমকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, নমুনা পরীা তাদের চাকরি না, রাষ্ট্রের কল্যাণে স্বেচ্ছাসেবা হিসেবে তারা এটি করছেন। স্থানীয় সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত শুক্রবারের সভাটিকে অবশ্য ‘আনুষ্ঠানিক মিটিং’ বলতে চাননি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির সভাপতি যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। তার ভাষ্য, ‘স্বাস্থ্য সচিব মহোদয় এই অঞ্চল সফর করছেন। আজ তিনি যশোরে এসেছিলেন। তার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়। সেই কারণে এই সভায় কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।’ যশোরে থাকায় সভায় যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পলী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যও।
সভা সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলাম করোনা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে, যশোরে কী কী সমস্যা রয়েছে- সেসব বিষয় জানতে চান। আলোচনায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে নমুনা পরীার বিষয়টিও আসে। সভা শেষে জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন যবিপ্রবি ল্যাবে নমুনা পরীার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।সভায় উপস্থিত একজন জানিয়েছেন, তিনিসহ সিভিল সার্জন, বিএমএ সেক্রেটারি ডা. এমএ বাশার প্রমুখ যবিপ্রবি ল্যাবে নমুনা পরীার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। তারা বলেছেন, যবিপ্রবি ল্যাবে নমুনা পরীার ফলাফল সঠিক হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন না। সেই কারণে ওই ল্যাবে পরীা বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। সভা শেষে সিভিল সার্জন বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচিব মহোদয়কে আমরা বিষয়টি বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’
যশোরের জেলা প্রশাসক ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, যবিপ্রবির টেস্ট নিয়ে কথা উঠেছে। সেখানে বেশি পজেটিভ রেজাল্ট আসছে বলে সভায় কেউ কেউ বলেছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য সচিব শুনেছেন। হয়তো তিনি একটি এক্সপার্ট টিম পাঠাবেন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। স্থানীয় সরকার, পলী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘বেশি বেশি পজেটিভ রেজাল্ট আসছে বলেই কি ল্যাবে পরীা বন্ধ করে দিতে হবে? সরকারের পলিসি হলো আরো বেশি পরীা করা। ল্যাব বন্ধ করা নয়।’
‘সভায় আমি বলেছি, যবিপ্রবি ল্যাবে অথবা পরীার প্রক্রিয়ায় যদি কোনো ফল্ট থাকে, তাহলে তা যাচাই করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য সচিব বিষয়টি শুনেছেন। আমার মনে হয় উনি দু-একদিনের মধ্যে এক্সপার্ট টিম যশোরে পাঠাবেন। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে এক্সপার্ট সংকট রয়েছে বলে সচিব জানিয়েছেন’, বলেন স্বপন ভট্টাচার্য্য। ঢাকা থেকে এক্সপার্ট পাঠানোর বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন। শুক্রবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো আপত্তি নেই। আগেই বলেছি আমাদের পরীা সম্বন্ধে আমি খুবই কনফিডেন্ট।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণা করি। রোগ নির্ণয় করা আমাদের কাজ না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমরা স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছি। নমুনা পাঠানো বন্ধ করে দিলেই তো আমাদের ল্যাবে আর কোভিড-১৯ নির্ণয়ের কাজ হবে না।’ সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মু. আনোয়ার হোসেন, যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩৭ বীরের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নেয়ামুল হালিম, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ রায়, প্রেসকাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, ইবনে সিনা হাসপাতাল যশোর শাখার এডমিন ইনচার্জ মোহাম্মদ রফিকুর রহমান তারেক প্রমুখ। সভায় স্বাস্থ্য সচিব যশোরে করোনা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে এবং সমস্যা কোথায় কোথায়, তা জানতে চান। স্থানীয় কর্মকর্তারা তাকে জানান, বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে ভারত থেকে অনেক বাংলাদেশি দেশে আসছেন। তাদের প্রায় সবাইকে ঝিকরগাছার গাজীর দরগায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। এতো মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা কঠিন। যাদের মধ্যে করোনার কোনো লণ নেই, তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো যায় কি-না, সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) চালু, যশোর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীার ব্যবস্থা করা, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়গুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তুলে ধরেন সচিবের কাছে। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন সভা শেষে জানান, স্বাস্থ্য সচিব বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে শুনেছেন।