‘চোখে দেখি না বলে কি ত্রাণ পাবো না?’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘লকডাউনের কারণে বাইরে বের হতে পারছি না। কোনো জায়গা থেকে সাহায্যও পাচ্ছি না। করোনার সময়ে অনেকেই অনেক সাহায্য পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা চোখে দেখি না। কোনো সাহায্যও পাই না। চোখে দেখি না বলে কি ত্রাণ পাবো না?’—এভাবেই করোনার সময় উপার্জনহীন হয়ে পড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খাদিজা বেগম সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন। খাদিজা বেগমের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। তার আরও তিন বোন, এক ভাইও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বাবা নেই। সবাইকে আগলে রাখা মাও অসুস্থ।
এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা ভাতা পান তিনি। এই প্রসঙ্গে খাদিজা বেগম বলেন, ‘ভাতার টাকা দিয়েই কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। কিন্তু এই কয়টা টাকা দিয়ে কি একজন মানুষ চলতে পারে? এছাড়া আমাদের তো আর কিছুই করার নাই। সরকার নাকি অনেক সাহায্য দিচ্ছে! কিন্তু আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মিরপুরের বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ও আমার ভাই রাশেদুল ইসলাম—দুজনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। করোনা আসার পর আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। কারও কাছে কিছু চাইতে পারছি না। এই পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি।’
রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা হিমু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও মাশরুম উৎপাদন ও বিপণনের ব্যবসা রয়েছে তার। করোনার পর ব্যবসায় এক প্রকার ধস নেমেছে। তিনি বলেন, ‘এই রমজান মাসেই আমার তিন লাখ টাকার বেশি লস হবে। গত দুই মাস ধরে ব্যবসা নাই। যা সঞ্চয় আছে তাতে আরও সপ্তাহখানে চলতে পারবো। এরমধ্যে মাশরুমের সব কাঁচামাল শেষ। যেগুলো উৎপাদন করেছিলাম, সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। লকডাউন উঠলে ব্যবসা শুরু করতে পারব কি না, দুশ্চিন্তায় আছি। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর কোনো সহায়তাও পাইনি।’
খাদিজা বেগম, রফিকুল ইসলাম, রাশিদুল ইসলাম ও হিমুই নন; তাদের মতো কষ্টে আছেন আরও অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ত্রাণ নিতে পারেন না। এই কারণে চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার-কর্মীরা এ বিষয়ে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নাজরানা ইয়াসমিন হীরা বলেন, ‘করোনার সময়ে বেকার, দরিদ্র ও কর্মহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও আর্থিক সেবা দিতে হবে।’ নাজরানা ইয়াসমিন হীরা বলেন, ‘অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে পুনরায় ব্যবসা শুরু করতে আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে। পাশাপাশি যে সব প্রতিবন্ধী চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।’ জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার সময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে ৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’ এরমধ্যে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা বিতরণের জন্য বলা হয়েছে বলেও তিনি জানান।