চার ঘন্টা চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে মৃত্যু : করোনার মধ্যে সাধারণ রোগীদের চরম অবহেলা : একমাসে এক ওয়ার্ডেই মৃত ৩৬

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ করোনা মহামারীর মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা একেবারই ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসকের অবহেলা ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। রোববার হাসপাতালের বেডে চার ঘন্টা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করার পর এক রোগী চিকিৎসকের চেহারা দেখতে পারেননি। অবশেষে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। মৃত্যু ঘোষণার জন্যেও ওয়ার্ডে কোন চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে একমাসে হাসপাতালে একটি ওয়ার্ডেই মারা গেছেন ৩৬ জন। যাদের বেশিরভাগই যথাযথ চিকিৎসা পাননি।
রোববার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন যশোর সদর উপজেলার হালসা গ্রামের আবু হোসেন (৫০)। ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে স্ট্রোকের রোগী হিসেবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রেজিস্ট্রেশন নং-১৮৪০৮/০৪। পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের ১০ নং বেডে তাকে রাখা হয়। চার ঘন্টা যাবত এ ওয়ার্ডে কোন চিকিৎসক ছিলেন না। রোগীর মুমূর্ষু অবস্থা দেখে স্বজনরা চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিন্তু সেখানে কর্মরত কারো কোন সহায়তা পাননি। রোগীর সাথে স্বজন ফজলুর রহমান জানান, এক পর্যায়ে তারা আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এর কাছে ছুটে যান। তিনিও কোন চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে পারেননি। সেখান থেকে বিফল মনোরথ হয়ে ওয়ার্ডে ফিরে দেখেন আবু হোসেন আর নেই। বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা গেছেন। তখন সকাল ৯টা বাজে। এ সময় শোকে-ক্ষোভে মর্মাহত স্বজনদের হাতে সিনিয়র স্টাফ নার্স মুক্তা রাণী ও বহিরাগত রাসেল লাঞ্ছিত হন।
এদিকে, আবু হোসেনের মৃত্যু ঘোষণার জন্যেও কোন চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। অবশেষে লাশ জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরাই তার মৃত্যু ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরএমও ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন একজন ইস্টার্ন চিকিৎসক। সেহ্রি খেতে গিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তত্ত্ববাধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তার ছিল না এটাই সঠিক। এ জন্যে কোন তদন্ত কমিটি প্রয়োজন নেই। তাকে চিঠি দেয়া হবে।
করোনা মহামারীর মধ্যে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা নতুন নয়। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে গতকাল রোববার ৩ মে পর্যন্ত পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে মারা গেছেন ৩৬ জন রোগী। এর মধ্যে সর্বাধিক সাতজন মারা যান ২৪ এপ্রিল। মৃতরা হলেন- ঝিকরগাছা কাটাখালী গ্রামের সাহেব আলী (৬৫), চৌগাছার জামিরা গ্রামের রেজাউল ইসলাম (৬০), শালিখার হরিশপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৬৫), মাগুরার বাগডাঙ্গা গ্রামের উকিল উদ্দিন (৬০), যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সালাম (৬০), ঝুমঝুমপুরের জসিম উদ্দিন (৪৫) ও বাঘারপাড়ার বহরামপুর গ্রামের হাসান মোল্লা (৭০)। এছাড়া ১৬ এপ্রিল মারা গেছে চারজন। ২৬ তারিখে তিনজন, ২৩ তারিখে তিনজন, ১ তারিখে ১২ তারিখে ২১ তারিখে দুইজন করে মারা যান। করোনা সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম থাকলে তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। মিলছে না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা। ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারাও দায়সারা দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে, অবহেলা ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।