নিখোঁজ সাংবাদিক কাজল বেনাপোলে উদ্ধার এক মামলায় আদালতে, ৫৪ ধারায় কারাগারে

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর যশোরের বেনাপোল সীমান্তে উদ্ধার হওয়া ঢাকার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় জামিন দিলেও ৫৪ ধারার নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রবিবার (৩ মে) বেলা ৩টার দিকে সাংবাদিক কাজলকে পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আদালতে আনা হয়। এরপর যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে বিকাল চারটার পর শুনানি শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকার শেরেবাংলা নগর, কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানায় আইসিটি অ্যাক্টে মামলা থাকায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ আটকাদেশ পেতে নতুন করে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে গ্রেফতারের আবেদন জানায়। পরে বিচারক এ মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামান ৫৪ ধারায় আটক প্রসঙ্গে বলেন, তার বিরুদ্ধে ঢাকায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে তাদের কাছে খবর এসেছে। ফলে তাকে সন্দেহভাজনভাবে আটক করা হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। কারাগারে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, ‘শুধু উনি (কাজল) নন, নতুন যারা কারাগারে আসছেন, করোনার সময় তাদের প্রত্যেককে আলাদা রাখা হচ্ছে।’ কাজলের ছেলে মনোরম পলক জানান, একটি মামলায় জামিন হয়েছে। তিনি বেঁচে আছেন, এজন্য শুকরিয়া। তার বাবার খোঁজ-খবর রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন পলক। গত ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন দৈনিক পকাল পত্রিকার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল। ১১ মার্চ শফিকুলের স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন ঢাকার চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রায় দুই মাস পর শনিবার (২ মে) রাতে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে উদ্ধারের দাবি করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর রঘুনাথপুর ক্যাম্পের সদস্যরা। অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগে তাকে আটক দেখিয়ে গতকাল রবিবার সকালে তাকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে বেলা ১২টার দিকে তাকে যশোরের আদালতে পাঠায় পোর্ট থানার পুলিশ।
বেনাপোল থানার ওসি মামুন খান জানান, সাংবাদিক কাজলকে রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা উদ্ধার করেন। অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগে তাকে আটক দেখিয়ে থানায় হস্তান্তর করা হয়। বেলা ১২টার দিকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, বেনাপোল থেকে পাঠানোর সময় তার পিছমোড়া দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরানো ছিল না। নিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো দেওয়া হতে পারে। তবে, এটি ভুল নয় দাবি করে তিনি বলেন, মাস ছয়েক হলো মামলার আসামিদের পিছমোড়া দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরানোর নিয়ম হয়েছে। এদিকে বেলা তিনটায় আদালতে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজল কুশল বিনিময় করেন। সেই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন আলোর মুখ দেখছি, আমি দেশবাসীর দোয়া চাইছি!’ সাংবাদিক কাজলের ছেলে মনোরম পলকও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এরপর কাজলকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সেখানেই তিনি দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। বেলা চারটার পর বিচারক এজলাসে ওঠেন।
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পকাল’-এর অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে কোনও সন্ধান না পেয়ে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন। ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেস কাবে সংবাদ সম্মেলন করে শফিকুল ইসলাম কাজলকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেওয়ার দাবি জানায় পরিবার। ১৮ মার্চ প্রেস কাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক কাজলের সন্ধান চাওয়া হয়। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিক সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।