ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ের গল্প শোনালেন তামিম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥এশিয়া কাপের মঞ্চ। সন ২০১৮। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তামিম অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু এক বাউন্সারে সব ওলট-পালট। ২২ গজে ব্যাট ফেলে তামিম ছুটে যান হাসপাতালে। এক হাতে প্লাস্টার বেঁধে তামিম ফেরেন স্টেডিয়ামে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয় তামিম ‘আউট অব এশিয়া কাপ’। কিন্তু বাংলাদেশ ইনিংসের শেষে তামিম ভাঙা হাতে ফেরেন ২২ গজে। খেলেন একটি বল। কোনো রান নেননি। কোনোমতে ঠেকিয়েছেন শুধু। কিন্তু তামিমের ওই এক বলের কারণে পরের ১৬ বলে মুশফিক তোলেন ৩২ রান।
বাংলাদেশ দলের রান এক লাফে ২২৯ থেকে ২৬১। ওই রান তাড়া করে জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা। সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের নায়ক ছিলেন তামিম। সেদিনের ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ের পেছনে রয়েছে অসীম বীরত্বের এক গল্প। মুশফিক ব্যাটিংয়ে থাকায় জানতে পারেননি কিভাবে কি হয়েছিল। শনিবার রাতে জাতীয় দলের সতীর্থকে ইনস্টাগ্রাম লাইভে সেই গল্প শুনিয়েছেন তামিম। তামিম বলেন, ‘আমি হাসপাতাল যাচ্ছিলাম ও মোবাইলে স্কোর দেখছিলাম। আমাদের দুই-তিনটা উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়ে গেলো। তোর আর মিথুনের একটা দারুণ জুটি হলো। ডাক্তারের কাছে ঢুকার আগে এ পরিস্থিতি ছিল। আমি যখন আবার ফেরত আসছিলাম তখন আবার একটা ধ্বস নামলো। দুই -তিনটা উইকেট পড়ে গেল। ব্যাটসম্যানরা সবাই আউট। ড্রেসিংরুমে ঢুকে দেখি ‍তুই ব্যাটিংয়ে। আর দলের স্কোর কোনোমতে এগিয়ে যাচ্ছে।’
‘ড্রেসিংরুমে কথা বলতে বলতে মাশরাফি ভাই (তখন অধিনায়ক ছিলেন) আমাকে বলে যা ব্যাটিং কর! আমি শুরুতে ফাজলামো হিসেবে নিয়েছিলাম। আমাদের ফিজিও থিহান আবার মাশরাফি ভাইকে বলছিল, ‘‘তুমি কি পাগল নাকি! ওর স্লিং লাগানো। কিভাবে ব্যাটিং করবে।’’ এটা নিয়ে আলোচনা করতে করতে দেখি তুই মারা শুরু করছিস। একশ’র কাছাকাছি হয়ে গেছে তোর। তখন আলোচনা সিরিয়াস হয়ে গেল। আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসলাম যদি মুশফিক স্ট্রাইকে থাকে এবং ওভার বাকি থাকে তাহলে আমি ব্যাটিংয়ে যাবো ওভাবেই। আমাকে ডাক্তার বলেছিল, ওটা নিয়ে দৌড়ানো যাবে না। কারণ মাত্রই হাত ভেঙেছিল। রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপার আছে। দূর্ভাগ্যবশত চার বা পাঁচ নম্বর (পাঁচ নম্বর) বলে মুস্তাফিজ আউট হয়ে গেল।’ ‘আমাদের সবার জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন পাগলামি ভর করে। হয়তোবা তুই নিজেও জানিস না যে, তুই কি করতে যাচ্ছিস! ওই পাঁচ সেকেন্ড আমার ওটাই হয়েছিলো। আমি ব্যাট নিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। আমাদের কোচ স্টিভ রোডস পেছনে দৌড় দিয়ে এসেছিলো। আমাকে থামিয়ে বলে, ‘‘তুমি কি করতে যাচ্ছো? আমি বললাম, ‘আমি যাই।’ ও আমায় আবার বলল, ‘এটা তো পরিকল্পনা ছিলো না।’ আমি বললাম, ‘আমি ম্যানেজ করতে পারবো।’ তখন ও আমাকে আমার দায়িত্ব নিতে বলে।’
‘আমার মতে ওই মুহূর্তে আমি ঠিক কাজটা করেছি। আর ওই সময়ে আমাকে সবচেয়ে সহজ বলটাই ওরা করেছে। বোলার যদি আমাকে ইয়র্কার বা উইকেটে বল করতো তাহলে কঠিন হয়ে যেতো। তুই জানিস যে, আমার সব পরিসংখ্যান, সব ইনিংস মনে থাকে। কিন্তু তোর ওই ইনিংস আমার মনে নেই। এতো ব্যথায় ছিলাম যে আমি কিছু মনে রাখতে পারিনি। যেভাবে চার-ছয় মেরেছিলি আমার কোনো ধারণাতেও ছিল না।’ আলোচনার ফাঁকে তামিমও মুশফিকের কাছে জানতে চান, তামিমকে মাঠে ঢুকতে দেখে তাঁর মাথায় কি চলছিলো? জবাবে মুশফিক বলেন, ‘আমি আসলে ওরকম কিছু প্রত্যাশা করিনি। আমার কাছে সেরকম কোনো তথ্য আসেনি যে আমি থাকলে তুই ব্যাটিংয়ে আসবি। ওভাবে চিন্তা করে খেলিনি। আমি চাচ্ছিলাম শেষ পর্যন্ত থাকতে। কারণ, শেষ দুই তিন ওভারে যত রান করতে পারি সেটা বোনাস হবে। আমি জানতাম এবং মিথুনের সঙ্গেও কথা বলছিলাম যে, এখানে যদি ২৩০ এর বেশি করি তাহলে চ্যালেঞ্জিং স্কোর হবে। মুস্তাফিজ আউট হওয়ার পর খারাপ লাগছিলো। কারণ, তখন মাত্র আমি মারা শুরু করেছিলাম। আফসোস করেছিলাম যে, আরেকটু থাকলে ভালো হতো।’ ‘কিন্তু তোকে আসতে দেখে মনে হয়েছিলো আমি এখন রাজা। আমাকে শাসন করতে হবে। এরকম আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছিলো। পরের ওভারে দেখি থিসারা পেরেরা আসছে। ওকে দেখে আরও মন ভালো হয়ে যায়। যে যে জায়গায় বলগুলো চেয়েছিলাম সেখানে সেখানে বলগুলো দিয়েছে। ডেথ ওভারে যেসব জায়গায় বল খুঁজি ও সেগুলোই করেছে। যে স্কোর হয়েছিলো ওটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। সবাই খুব ভালো বোলিং করেছিলো।’ মুশফিক সেই ম্যাচে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রান করেছিলেন। বাংলাদেশ সেই এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু শিরোপা হারায় ভারতের কাছে। প্রসঙ্গত, মুশফিকুর রহিম পুরোটা টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন পাঁজরে ব্যথা নিয়ে।