যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর; তাদের জন্য গিলিড সায়েন্সেস-এর তৈরি ওষুধ রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, শুক্রবার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এফডিএ রেমডেসিভিরকে ‘জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন’ দিয়েছে। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, স্বাস্থ্য ও মানবসেবাবিষয়ক মন্ত্রী অ্যালেক্স আজার, (এফডিএ) কমিশনার ড. স্টিফেন হান ও গিলিড সায়েন্সেস-এর সিইও’র মধ্যকার এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৯ এপ্রিল (বুধবার) হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতার ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’-এর পরিচালক এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বনামধন্য বিজ্ঞানী বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা অন্যদের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এই ওষুধ মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখে কিনা, তা এখনও প্রমাণিত নয়। এর কয়েকদিনের মাথায় ‘জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন’ পেল ওষুধটি।
এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আর যে রোগীদের মৃত্যু এড়ানোর আর কোনও উপায় নেই তাদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছে। এফডিএ-এর অনুমোদনের পর গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হলো। মার্কিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম শাফনার এনবিসিকে বলেছেন, এখন থেকে ডাক্তাররা ‘হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের জন্য প্রেসক্রিপশনে রেমডেসিভিরের নাম লিখতে পারবেন’। গিলিড সায়েন্সেস-এর সিইও ড্যানিয়েল ও’ডে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত’।
বুধবার হোয়াইট হাউসে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১০৬৩ মানুষের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ফাউচি। তিনি জানান, প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রমাণিত হয়েছে, করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার সময়সীমাকে কমিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রেমিডেসিভির সুস্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, রেমডেসিভির গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার যেখানে ৮ শতাংশ ছিল, প্লেসেবো গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার ছিল ১১.৬ শতাংশ। তবে এই ফলাফল পরিসংখ্যনিকভাবে প্রমাণিত নয়। এর অর্থ হলো, এই পার্থক্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন না আসলেই রেমডেসিভির মৃত্যু প্রতিরোধ করে কিনা।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ওষুধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। এরই একটি হলো রেমডেসিভির। গিলিড সায়েন্সেস-এর তৈরি এ ওষুধটি অতীতে ইবোলার বিরুদ্ধে পরীক্ষা করা হলেও তেমন সফলতা মেলেনি। তবে বিভিন্ন সময়ে পশুর শরীরে চালানো বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, সার্স ও মার্স-এর মতো করোনা প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এ ওষুধ কার্যকর হতে পারে। তাই এবার করোনাপ্রজাতির নতুন ভাইরাস কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের চিকিৎসায় রেমডেসিভির কার্যকর কিনা তা নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ পরীক্ষা চালাচ্ছে। তবে সদ্যপ্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক খসড়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চীনে চালানো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রেমডেসিভিরের কার্যকরিতা প্রমাণিত হয়নি।