করোনা সংকটে ই-কমার্সে বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্ট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের সংকট যেন আরও ঘনীভূত না হয়, নতুন করে লোকজন যেন সংক্রমিত না হয়, এজন্য দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নগদ টাকার বদলে ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে বিল নিতে বেশি আগ্রহী। ফলে ই-কমার্সে বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্ট। দেশে করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট সংকটের আগে ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্টের হার ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বেশি জনপ্রিয় ছিল ক্যাশ অন ডেলিভারি বা সিওডি। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্টের হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের কাছেও এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনও তথ্য নেই। তবে ই-কমার্স খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে ই-কমার্সে পণ্যের অর্ডার বেড়েছে চারগুণের বেশি।
ই-কমার্স সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এখন চালু থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ৭০-৮০ শতাংশ পেমেন্ট ডিজিটাল মাধ্যমে নিচ্ছে। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান শতভাগ পেমেন্ট নিচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। তাদের ভাষ্য, এতে নগদ টাকা নেওয়ার সময়ে যে ঝুঁকি থাকে, তা এড়ানো যায়। ডিজিটাল মাধ্যম হলো এমএফএস (মোবাইল ব্যাংকিং) সার্ভিস, ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা জানান, তারা ক্রেতাদের নগদ টাকায় বিল পরিশোধের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছেন। কারণ, নগদ টাকা নিতে গেলে ক্রেতা ও ডেলিভারিম্যান দুই পক্ষই করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ক্রেতা কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধে সমর্থ না হলে বিকাশ বা নগদ মাধ্যম ব্যবহার করে বিল পরিশোধে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা মনে করেন, নগদ টাকার লেনদেন থাকবেই। এত সহজে ক্রেতাদের ‘ক্যাশলেস’ করা যাবে না।
জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন গ্রোসারি প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ বলেন, ‘আমাদের ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণের হার ৩০ থেকে ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। ৩০ শতাংশ নগদ টাকায় পেমেন্ট দিচ্ছে। ঝুঁকি থাকলেও নিতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, তাদের (চালডাল) গ্রোথ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগে তাদের প্রতিদিনের অর্ডার সীমাবদ্ধ ছিল ৩ হাজারে। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ থেকে ৬ হাজারে। কিছু দিনের মধ্যে তাদের আরও দুটি ওয়্যারহাউজ চালু হবে। ওয়্যারহাউজ দুটো চালু হলে চালডাল ডটকম প্রতিদিন অন্তত ৭ হাজার অর্ডার নিতে পারবে। মীনাক্লিকের প্রধান আহমেদ শোয়েব ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে আমাদের ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে।’ তিনি মনে করেন, ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্টের সংখ্যা বাড়ার পেছনে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছাড়াও আরেকটি কারণ রয়েছে। ব্যাংকগুলো বর্তমানে ই-কমার্স কেনাকাটায় ৫-১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। অনেক মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও ছাড় দিচ্ছে। ফলে ঘরে বসে কেনাকাটায় ছাড় মিলছে। তিনি জানান, মীনাক্লিকের অর্ডার আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিওফার্মার্স/ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন বলেন, ‘তারা শতভাগ পেমেন্ট নিচ্ছেন ডিজিটাল মাধ্যমে। ক্যাশ অন ডেলিভারির কোনও অর্ডার তার প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে না।’ তিনি মনে করেন, এতে ক্রেতা ও ডেলিভারিম্যান দুই পক্ষেরই সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব অন্তত এই ইস্যুতে। তিনি জানান, করোনার এই সময়ে পণ্যের অর্ডার বেড়েছে। তবে পণ্য সংকট (যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে) থাকায় বেশি অর্ডার তার প্রতিষ্ঠান নিতে পারছে না। ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি করোনাকালে চালু হওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ‘ইভ্যালি এক্সপ্রেস’ সেবায় শতভাগ পেমেন্ট নিচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে।
দেশে একাধিক ই-কমার্সভিত্তিক কুরিয়ার সার্ভিস গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে রয়েছে ই-কুরিয়ার বিডি, বিদ্যুৎ, পেপারফ্লাই। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও ই-কমার্সের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে। তবে সেবা বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ। এ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ার বিডির প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, ‘আমরা ক্যাশ থেকে ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করছি। আমরা সিওডিকে (ক্যাশ অন ডেলিভারি) বিওডিতে (বিকাশ অন ডেলিভারি) রূপান্তরের চেষ্টা করছি। তাহলে আমরা বেশিরভাগ পেমেন্ট ‘ক্যাশলেস’ অবস্থায় নিতে পারবো। এটা করতে পারলে ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্ট করতে। প্রমোটও করছি। ক্রেতারাও সচেতন। তারা আমাদের এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। ফলে ডিজিটাল পেমেন্টের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় কিনা এটা আমরা নিশ্চিত নই। তারপরও আমরা সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা ডেলিভারিম্যানের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, অন্যদিকে ক্রেতাও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত থাকতে পারেন। তার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। ফলে দুই পক্ষকেই সচেতন থাকতে হবে। এজন্য ডিজিটাল পেমেন্টের কোনও বিকল্প নেই।’