এক বন্দিসহ ছয় কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন একজন বন্দি। একই হাসপাতালে বন্দিদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় কারারক্ষী। আক্রান্তরা রাজধানীর দুটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া কারাগার সংশ্লিষ্ট ৬২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল একজন কারারক্ষীর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে কারা অধিদফতর। এরপর আক্রান্ত কারারক্ষীর রুমমেটসহ আর পাঁচজনের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা একজন কারাবন্দিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত কারাবন্দি থেকে কারারক্ষীদের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে বলে ধারণা করছেন কারা চিকিৎসকরা।
কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, আক্রান্ত সাতজনকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ডেডিকেটেড দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের মধ্যে ভাইরাসটির উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দি রোগীদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হাসপাতাল থেকে কারারক্ষীরা কোডিভ-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কারারক্ষী যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডিউটি করার সময় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা থাকতেন ব্যারাকে, সেখানেও ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পুরো ব্যারাকটি লকডাউনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে ব্যারাকের পুরো ১০৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন এমন যারা আছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
কারা অধিদফতর সংলগ্ন একটি ব্যারাকে থাকা কারারক্ষীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কারাবন্দিদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সদস্য তারা। ব্যারাকটিতে ১০৮ জন কারারক্ষী থাকতেন। ব্যারাকের ষষ্ঠ তলায় যেসকল কারারক্ষী থাকতেন তাদের সরিয়ে অন্যত্র রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছয়জন কারারক্ষীর মধ্যে দুই জনকে কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় ২০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড। বাকি চারজনকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বন্দিকেও একই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত কারারক্ষীরা অধিদফতর সংলগ্ন ব্যারাকের ষষ্ঠ তলায় থাকতেন। শুধুমাত্র ষষ্ঠ তলাটি বন্ধ করা হয়েছে। কারারক্ষী, স্টাফসহ ৬২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘৬২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের নমুনা দেখা দিচ্ছে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত একজন বন্দি ও ছয়জন কারারক্ষীর মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।’ হোম কোয়ান্টিনে থাকাদের মধ্যে কয়েকজনকে বকশি বাজারের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার ও কেরানীগঞ্জে অব্যবহৃত মহিলা কারাগারের কক্ষে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. খুরশিদ আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের মহিলা কারাগারে কয়েকজনকে রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারও রয়েছেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বহন করেছেন। বাকিরা কারারক্ষী।’
ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় একজন বন্দি ও কারারক্ষীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালটি থেকে বন্দি রোগীদের কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনও বন্দি চিকিৎসাধীন নেই। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে কয়েকজন কারাবন্দি চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডা. খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেসব কারারক্ষী হাসপাতালে দায়িত্বপালন করছেন তাদের পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে আরও সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যালে এখন কোনও রোগী নেই। বিএমএমএমইউতে কয়েকজন চিকিৎসাধীন আছেন।’ উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রত্যেকটি কারাগারে নতুন বন্দিদের ১৪ দিনের জন্য পৃথক ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণে রাখার মাধ্যমে কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তা পরীক্ষা করার জন্য জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া কারা ফটক দিয়ে প্রবেশের পর বন্দিদের হাত ধোয়া ও পরিষ্কার হওয়ার জন্য পানি এবং সাবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে কারাগারের অভ্যন্তরে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্দিদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সেজন্য চিকিৎসক ও কারা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে। গত ১০ মার্চ থেকে কারাগারগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে বন্দিদের রাখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সাধারণ বন্দিদের থেকে পৃথক ভবনে এই ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।