৩১ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ বৈশ্বিক সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের বিরুদ্ধে গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ভুয়া খবর ও ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়া ঠেকাতে ব্যর্থতা এবং তথ্যের অপব্যবহার নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। অনেক দেশে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে আবার ফেসবুকের বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য ডার্ক ওয়েবে প্রকাশ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
    তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ন্যাকেড সিকিউরিটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সম্প্রতি ৩০ কোটি ৯০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর হাতিয়ে নেয়া মোবাইল নম্বর অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। সাইবল নামে আরেক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তা গবেষক বব ডিয়াচেনকোর পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
    প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবল ডার্ক ওয়েবে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত ২৬ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক প্রোফাইলের একটি ডাটাবেজের সন্ধান পায়, যা প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৫৪০ ডলারে তথ্য যাচাইয়ের জন্য কিনে নিতে সক্ষম হয়। ওই ডাটাবেজে ফেসবুক ব্যবহারকারীর ইউজার আইডি, ই-মেইল ঠিকানা, পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, বয়স, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসের তথ্য ছিল। ডাটাবেজটি আগেও পোস্ট করা হয়েছিল। তখন তা পর্যালোচনা করেছিলেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বব ডিয়াচেনকো। এর ডাটাবেজটি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এতে আরো ৪ কোটি ২০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য যুক্ত করা হয়।
    তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় কিছুদিন ধরেই চাপে রয়েছে ফেসবুক। গত বছরের ডিসেম্বরে ফেসবুকের বেহাত হওয়া প্রায় ২৭ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।
    ২০১৮ সালে তথ্য বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর থেকে ফেসবুকের একের পর এক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসতে থাকে। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়া এবং তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনার জেরে একই বছরের মার্চে ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে হাজির হতে বাধ্য হয়েছিলেন।
    ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর ফেসবুক প্রথমে জানায়, তাদের পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকের নিরাপত্তা ত্রুটি কাজে লাগিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে তাদের মোট সাড়ে আট কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা। ফেসবুকের প্লাটফর্মে অনুমোদিত নিজেদের একটি অ্যাপের মাধ্যমে এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয় ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা।
    ওই সময় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ফেসবুক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ফেসবুকের আয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপনে আকর্ষণ খুঁজে পাচ্ছেন না। যে কারণে ফেসবুককে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আয় বাড়াতে মরিয়া প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে সাইবার অপরাধী থেকে বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠান।
    ফেসবুকের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি নতুন বাজারের ওপর নির্ভর করছে। প্রতিষ্ঠানটি সে পথেই হাঁটছে। ফেসবুক নিজেদের বিভিন্ন সেবায় বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করেছে। মেসেঞ্জার ছাড়াও ইনস্টাগ্রাম ও স্টোরিজে বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা প্রতিষ্ঠানটির মূল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল করে দিচ্ছে।