গণস্বাস্থ্যের কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সরকারের কোনও প্রতিনিধি আসেননি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যাননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনও প্রতিনিধি। যাননি ওষুধ প্রশাসনের কোনও কর্মকর্তাও। যদিও এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণস্বাস্থ্যের টেস্টিং কিট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুলাহ চৌধুরী জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনিও কোনও উত্তর দেননি। ফলে এখন তারা এসব কিট নিজ উদ্যোগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে পৌঁছে দেবেন। তবে গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির কাছে কিট হস্তান্তর করা হয়। বেলা ১২টার দিকে ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন সংস্থা সিডিসি’র কাছে কিট হস্তান্তর করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কিট পরীা ও মতামতের জন্য নমুনা পাঠানো হবে।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুলাহ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই কিট তৈরিতে ওষুধ প্রশাসনের ডিজিও আমাদের সাহায্য করেছেন। গতকাল তারা হঠাৎ আমাদের জানালেন যে আজ আসতে পারবেন না। তাই আমাদের দুঃখ যে আপনাদের সামনে হস্তান্তর করতে পারছি না। তবে তারা কাল এটা নিয়ে বসবেন। জানি কেন তারা আজ আসেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও আমরা এই অনুষ্ঠানে আসার কথা বলেছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। যদিও তিনি এখন কারণে-অকারণে অনেক বেশি ব্যস্ত আছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) দিয়ে দেবো। বাকিদের কাল সরকারিভাবে সবার অফিসে পৌঁছে দেবো। আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটরিকে আমন্ত্রণ করা হয়, কিন্তু তারা অনুমতি পাননি বলে আসতে পারবেন না। কাল তাদের যার যত দরকার দেওয়া হবে।’
ডা. জাফরুলাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আশা করছি সরকার এ কিট যাচাই বাছাই করে খুব দ্রুত অনুমোদন দেবে। অনুমোদন প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন শুরু করবো। পর্যায়ক্রমে এক লাখ কিট দেওয়া সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবন নিয়ে দুই-চার জনের মনে প্রশ্ন, এটা দিয়ে কাজ হবে কিনা। সেইদিনকার ওরস্যালাইন আজকের যুগান্তকারী অবদান। আমরা মনে করি, এরই ধারাবাহিকতায় আজ আপনাদের কাছে এই কিট প্রকাশ করতে যাচ্ছি। এটা খুব সহজে কাজ করবে, এটা পৃথিবীর বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সহজলভ্য করবে।’ জাফরুলাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগ, উদ্ভাবনে অনেকে সাহায্য করেছেন। তাদের অনেকে স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত না। প্রধানমন্ত্রীর দফতর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, চীনের রাষ্ট্রদূত, এনবিআর, ইউএস-বাংলাসহ অনেকে আমাদের এই উদ্ভাবনে সাহায্য করেছেন। তারা আমলাতান্ত্রিকতার বাইরে এসে আমাদের উদ্ভাবনীতে সাহায্য করেছেন। তবে এখনও আমাদের যাত্রাপথে অনেক বাধা রয়ে গেছে। যেতে হবে অনেক দূর।’ করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ‘ এজ ঈঙঠওউ-১৯ উড়ঃ ইষড়ঃ ’ কিট তৈরির জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের দলটি কাজ করছে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে। বাকি গবেষকরা হলেন ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে অকান্ত পরিশ্রম করেছি। আমাদের পুরো টিম পরিশ্রম করেছে। সবকিছুর পরে আমরা বলতে পারি যে সফল হয়েছি। আশা করছি আমরা আগামীকাল থেকে উৎপাদনে চলে যাবো। আমরা দুই ধরনের কিট ডেভেলপ করেছি। করোনাভাইরাসের এন্টিজেন ডিটেকশন আর এন্টিবডি ডিটেকশন। এর ফলে শতভাগ রোগ শনাক্ত করতে পেরেছি। আমাদের কিটে টেস্ট করতে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগে। কাল ডিজি হেলথের সঙ্গে আমাদের মিটিং আছে। অনুমতি পেলে কিট উৎপাদনে চলে যাবো।’