রোজার এক দিন আগে আরও এক দফা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ আজ চাঁদ উঠলে কাল থেকে রোজা শুরু। আর এই রমজান মাসকে ঘিরে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তারা বলছেন, রোজার মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিম্মি করে প্রতি বছর অসাধু ব্যবসায়ীরা আখের গুছিয়ে নেন। সরকারি বাজার তদারকি সংস্থাগুলো শুধুমাত্র মূল্য তালিকা টাঙানোর দিকে জোর দেয়। অথচ তালিকায় মূল্য বেশি কেন লেখা হলো সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
রোজা শুরুর এক দিন আগেই আরও এক দফা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার যশোরের বড়বাজারে আমদানিকরা মোট দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৯০ টাকা, গত সপ্তাহে বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ টাকায়। দেশি চিকন দানার ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৩০ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা। ছোলার ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৮০ টাকা। বুটের ডাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকা। খেসারির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৯৫ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহে ছিল ১১০ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তিদের সাধারণত সাধ্যমত মুরিগ কেনার দিকে ঝোঁক থাকে। সে কারণে মুরগি ব্যবসায়ীরাও বসে নেই। সুযোগ বুঝে মুরগির দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। খামারের ব্রয়লার মুরগির দিক থেকে কিছুদিন আগেও ভোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। প্রায় অবিক্রিত থাকায় দামও অনেক কমিয়ে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু রমজান মাস এসে গেছে, তাই ব্যবসায়ীরা চাঙা হয়ে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার বড়বাজার মুরগির বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছিল ১০০ টাকায়। অবশ্য আরও কিছুদিন আগে বিক্রেতারা মাইকিং করেও ৮০ টাকায় বিক্রি করতে পারেনি। বিভিন্ন অপবাদের কারণে মানুষ ব্রয়লার মুরগি খাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। আস্তে আস্তে আবার মানুষ ব্রয়লার মুরগি খাওয়া শুরু করেছে। এ কারণে দামও বাড়ছে। সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকা।
উল্লেখ্য, যশোরের বড় বাজারে গত ২০ ফেব্রুয়ারি খেসারি ডাল বিক্রি হয় ৮০ টাকা। আমদানি করা মোট মসুর ডাল বাজারে বিক্রি হয় ৬৫ টাকা। গত ১৩ মার্চ বাজারে আলু বিক্রি হয় ১৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা। গত ২৭ মার্চ রসুন বাজারে বিক্রি হয় ৭০ টাকা কেজি। আদা বিক্রি হয় ১৬০ টাকা। এসব নিত্যপণ্যের দাম গত দু সপ্তাহ আগে বাড়ানোর পর রোজার একদিন আগেই আরেক দফা দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা।
বড়বাজারে রোজার বাজার করতে আসা এক ক্রেতা রবিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘রোজা আসলেই দোকানিরা জিনিপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। এ প্রবণতা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। কেন দাম বাড়লো তার কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায় না দোকানিদের কাছ থেকে। আবার এই সময়টা বাজার তদারকি সরকারি সংস্থাগুলোও তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু তারা শুধু মূল্য প্রদর্শনের ওপর জোর দেন। সে যে মূল্যই হোক তালিকা টাঙানো থাকতে হবে। অথচ পণ্যের দাম বাড়লো কেন, সে ব্যাপারে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।’ এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোর জেলা শাখার সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় সংস্থাটির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। রোজায় বাজার তদারকি জোরদার করা হবে। কোনোরকম অসংগতি পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’