অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এবার ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল ১৬ ডলারের নিচে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গিয়েছিল। নজিরবিহীনভাবে জ্বালানি পণ্যটি মাইনাস ডলার বা ডিসকাউন্ট মূল্যে বিক্রি হয়েছে। কতমির দিকে ছিল ব্রেন্ট ক্রুডের দামও। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেস কার্যদিবসে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৬ ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা ১৯৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন। নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে চাহিদা কমে যাওয়া, বাড়তি উত্তোলন ও সংরক্ষণ সক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতন দেখা দিয়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
রয়টার্সের কমোডিটি প্রাইন ইনডেক্স অনুযায়ী, গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ ডলার ৬৮ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ৫৪ শথাংশ কম। তবে দিনের শুরুতে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৫ ডলার ৯৮ সেন্টে নেমে গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালের জুনের পর এটাই ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বনিম্ন দাম।
অন্যদিকে গতকাল দিনের শুরুতে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের দাম ছিল ১০ ডলার ৮৯ সেন্ট। বিকাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির দাম ওঠে ব্যারেলপ্রতি ১১ ডলার ৬২ সেন্টে। সোমবার বিকালে ডব্লিউটিআইয়ের রেকর্ড দরপতন ঘটেছিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সোমবার দিন শেষের বেচাকেনায় জ্বালানি পণ্যটির দাম শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। ওই সময় মে মাসে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের দাম দাঁড়ায় মাইনাস ৩৭ ডলারে। এর আগে কখনই জ্বালানি তেলের দাম শূন্য ডলারের নিচে নামেনি।
এ বিষয়ে নিউইয়র্কভিত্তিক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ওনাডা করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মওয়া বলেন, জ্বালানি তেলের এ দরপতন নজিরবিহীন। আগে কখনই এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। মূলত চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া এবং সংরক্ষণাগারগুলোর সক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাওয়া এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ পরিস্থিতির পেছনে নভেল করোনাভাইরাসকে দায়ী করেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটির বেশি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছে। কমে গেছে মানুষ ও পণ্যের চলাচল। স্থবির হয়ে আছে পরিবহন খাতসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম। এ পরিস্থিতি জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। তবে চাহিদা কমলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে এখনো লাগাম টানা হয়নি। তাই বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে। কমতে শুরু করেছে দাম। কমতে কমতে এরই মধ্যে দরপতনের রেকর্ড গড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চাহিদা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোও জরুরি। এ বিষয়ে সিডনিভিত্তিক সিএমসি মার্কেটসের জ্যেষ্ঠ বাজার কৌশলবিদ মিখায়েল ম্যাকার্থি। তিনি বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণাগারগুলো এখনই খালি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। আগামী ১ মে থেকে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলো চুক্তির শর্ত মেনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন দৈনিক ৯৭ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনলে বাজার পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
রাশিয়া
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক রেকর্ড দরপতনকে ‘নজিরবিহীন ও নাটকীয়’ মনে করছে রাশিয়া। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেন, এ পরিস্থিতি সবাইকে অবাক করেছে। আগামী মাসে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলো চুক্তি মেনে জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন কমিয়ে আনার আগ পর্যন্ত বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাও হতে পারে।
নরওয়ে
জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানো নিয়ে এখনো সংশয়ে রয়েছে নরওয়ে। দেশটির তেলমন্ত্রী টিনা ব্রু সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা শিগগিরই বৈঠকে বসবেন। এতে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নরওয়ে ওপেক-নন ওপেক চুক্তির আওতায় জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমাবে কিনা তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
সৌদি আরব
জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি বদলাতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে সৌদি আরব। দেশটির সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে উত্তোলন কমিয়ে আনার জন্য রাশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে সৌদি আরব। আগামীতেও এসব উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে সৌদি আরব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ওপেক
রেকর্ড দরপতনের পর ওপেকভুক্ত কয়েকটি দেশ আগামী ১ মে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে চুক্তির শর্ত দ্রুত বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মঙ্গলবার ওপেকভুক্ত কয়েকটি দেশের জ্বালানিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেছেন। এ সময় তারা দ্রুত উত্তোলন কমিয়ে আনার কথা বলেন। তবে এ বৈঠকে কোন কোন দেশ অংশ নিয়েছে তা প্রকাশ করেনি ওপেক।