শারীরিক দূরত্ব না মানায় ঝুঁকি বাড়ছে যশোর শহরে

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ করোনাভাইরাসের কারণে যশোরের বড়বাজারে মানুষ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলছিল না। বাজারের প্রতিটি রাস্তা সরু হওয়ায় জনসমাগম এড়ানোর কোনো উপায়ও ছিল না। এ কারণে এ বাজারের মাছ বাজার শহরের খালধার রোডে ও কাঁচাবাজার এইচ.এম.এম রোডে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানকার সাপ্তাহিক পান হাটও বসানো হয়েছে সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে। তবে এইচ.এম.এম রোডের সরু রাস্তার দু’পাশে বাজার সম্প্রসারিত করায় জনসমাগম বেড়ে গেছে। ঘনবসতি এ এলাকার অনেকেই অস্বস্তি বোধ করছেন। খালধার রোড প্রশস্ত হওয়ায় সেখানে মাছ বাজার পেয়ে খুশি স্থানীয়রা।
এদিকে, আবাসিক এলাকায় সবজি ও মাছের দোকানিদের চেঁচামেচিতে দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে এলাকায় রীতিমত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ির সামনে বাজার বসায় উৎসুক এলাকাবাসীর আহেতুক ভিড় বেড়েছে। অনেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসছেন বাজার করতে। ফলে শারীরিক দূরত্ব না মানায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। অনাকাক্সিক্ষত জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
যশোর শহরের বড়বাজার বিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত। বাজার করতে প্রতিদিন এখানে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বাণিজ্যিক এই এলাকার অপ্রশস্ত রাস্তায় লোকজন শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে পারছিলেন না। নিরাপদ সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব ফলপ্রসুভাবে কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসন বড়বাজারের কাঁচাবাজার ও মাছ বাজার পাশর্^বর্তী সড়কের পাশে স্থান্তান্তর করে। বড়বাজারে মুদি দোকান, মুরগির দোকান, খাসির মাংসের দোকান এবং কাঠেরপুলে গরুর মাংসের দোকান আগের স্থানেই আছে। গত ২১ এপ্রিল থেকে কাঁচাবাজার এইচ.এম. রোডের কাঠেরপুলের মসজিদ থেকে নাথপাড়ার মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু ধারে বসানো হয়েছে। কিন্তু এইচ.এম.রোডের কালীবাড়ি এলাকা থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত রাস্তার দু ধারে আগের মতই সবজির দোকানগুলো বহাল আছে। তারা নতুন এলাকায় আসেনি। ফলে বড়বাজারের জনসমাগম কমেনি, বরং আরও বিস্তৃত হয়েছে। এইচ.এম.এম রোডের ঘনবসতি এলাকায় কাঁচাবাজার স্থানান্তর হওয়ায় এলাকার অনেকেই অস্বস্তি বোধ করছেন। যশোর ইনস্টিটিউটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলমের ব্যবসায়ী ছেলে শেখ রাকিবুল আলম জয় এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আবাসিক এলাকার সরু রাস্তার দু ধারে কাঁচাবাজার বসানোয় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকায় জনসমাগম বেড়ে গেছে। এলাকাবাসী করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল। দোকানিদের হাঁকডাকের কারণে এলাকার দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া বাজার শেষে রাস্তার ওপর থেকে আবর্জনাগুলো ঠিকমত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ফলে দুর্গন্ধে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ অপরদিকে, মাছ বাজার বসানো হয়েছে খালধার রোডের নাথপাড়া মোড় থেকে আর.এন.রোডের মাথা পর্যন্ত। পর্যাপ্ত চওড়া খালধার রোডের দু পাশে ৮ থেকে ১০ ফুট দূরত্বে একটি করে মাছের দোকান বসানো হয়েছে। টানা সোজাসুজি আধা কিলোমিটার এ রাস্তায় অসংখ্য মাছের দোকান বসেছে। লোন অফিস পাড়া, নাথপাড়া,নিকেরিপাড়া, বারান্দিপাড়া ও আর.এন.রোড বেজপাড়া সংলগ্ন এই রাস্তার দু পাশে এলাকাবাসী মাছের বাজার পেয়ে খুশি হয়েছেন। নিকেরিপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. সালাহউদ্দিন জানান, ‘প্রশস্ত খালধার রোডের দু ধারে মাছের বাজার বসায় আমরা খুশি হয়েছি। এখানে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বাড়ির পাশে থেকে স্বাছন্দ্যে মাছ ও সবজি কিনতে পারছি।’ বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার লোকজন একটা মাছ কিনতে পুরো পরিবারসহ খালধার রোডে চলে এসেছেন। সে ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব কেউ মানছেন না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের বড় জায়গা হচ্ছে কাঁচাবাজার ও মাছবাজার। তাই বাজারে অবশ্যই দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। বড়বাজারের ইজারাদার মীর মোশাররফ হোসেন বাবু জানান, ‘এখানে বাজার বসানোয় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু শারীরিক দূরত্ব ঠিক রেখে মানুষকে কেনাকাটা করাতে পারলে বাজার স্থানান্তরের উদ্দেশ্য সফল হবে।’ তিনি আরও জানান,‘ সপ্তাহে দু দিন বুধ ও শনিবার বড়বাজার কাঁচাবাজারেই পানের হাট বসানো হতো, সেটা গতকাল থেকে সম্মিলনী স্কুলের মাঠে বসানো হচ্ছে।’ বড়বাজার স্থানান্তর করার পরও খালধার রোডে ও এইচ.এম.এম রোডে জনসমাগম বেড়েছে, মানুষ কোনো শারীরিক দূরত্ব মানছে না, সে ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি-না, জানতে চাইলে বুধবার যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ লোকসমাজকে বলেন, ‘বড়বাজার থেকে কাঁচাবাজার ও মাছ বাজার আপাতত সঠিক স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে প্রশস্ত খালধার রোডের দু পাশে পর্যাপ্ত জায়গা আছে এবং এইচ.এম.এম রোডও যথেষ্ট লম্বা। দোকানগুলোও দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করছে। কিন্তু জনসমাগম বেড়ে গেছে। মানুষ শারীরিক দূরত্ব মানছে না। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে মানুষ বাজার করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’