পুলিশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে #৪৮ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১২২ জন সহ সারাদেশ ২১৭ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশে বেড়েছেই চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি করোনার সংক্রমণরোধে মাঠ পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছন্ন সক্রিয় রয়েছে পুলিশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক পুলিশ। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২১৭ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বুধবার (২২ এপ্রিল) বিকেলের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১ পুলিশ সদস্য। এর আগের দিন মঙ্গলবার একইদিনে ১০১ জন পুলিশ সদস্যের করোনায় আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে গত ৪৮ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১২২ পুলিশ সদস্য।
করোনার থাবায় এখন পর্যন্ত পুলিশের ১৭টি ইউনিট, জেলা ও ব্যাটালিয়নের সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ বুধবার (২২ এপ্রিল) তথ্যানুযায়ী, পুলিশে সবমিলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১১৭ সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটের। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। করোনায় প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদেরকে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক(আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য মতে, আক্রান্ত ২১৭ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১১৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। মোট আক্রান্ত ১১৭ জনের কেউ এখনো সুস্থ নন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৪ জন সিভিল স্টাফ। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, গত রোববার পর্যন্ত ডিএমপি’তে আক্রান্ত ছিলেন ৩৪ জন। সোমবারই আরও ৪৬ জন বেড়ে গিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০ জনে। এরপর মঙ্গলবার তা দাঁড়ায় ১০১ জনে। বুধবার তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭ জনে। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা অন্য সদস্যদের আলাদা করা হয়েছে। এক হাজারের অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) আক্রান্তের সংখ্যা গত সোমবার পর্যন্ত ছিল ৪ জন। কিন্তু মঙ্গলবার সেটা গিয়ে ঠেকে ২৬ জনে। এরপর নারায়ণগঞ্জে ১৬ জন। তারমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ জন। গোপালগঞ্জে আক্রান্ত ১৮ জন। তারমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন। সিএমপি’তে আগের ২ জনের সঙ্গে নতুন করে আক্রান্ত ১ জন। এসবিতে সোমবার পর্যন্ত আক্রান্ত ছিল ১ জন। কিন্তু গত মঙ্গলবার আরও তিনজন বেড়ে ৪ জন হয়। ঢাকা রেঞ্জ অফিসে আক্রান্ত ১ জন, আক্রান্ত অন্যান্যদের মধ্যে পুলিশের টিএন্ডআইএম’এ ১ জন, এপিবিএন-২ ময়মনসিংহে ১ জন, নৌ পুলিশে ১ জন, এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে ১ জন, কিশোরগঞ্জে ৯ জন, গাজীপুরে ৭, নরসিংদী ৬, শেরপুরে ৩ জন, ঢাকা জেলায় ২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন, ঝালকাঠিতে ১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ১৫ জনকে, হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন একজন, আইসোলেশনে রয়েছেন ৭ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬ জন। গত ৮ মার্চের পর থেকে মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয় ৭৭৭ জনকে। ৩৯ জন ছাড়পত্র পেলেও এখনও রয়েছেন ৬১৪ জন। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে ২৫৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৬৩ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৪৬ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫ জন। করোনার ক্রান্তিকালে সম্মুখযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ পুলিশ কেন বিশ্ব মানব সভ্যতাকে আমি আমার ৭০ বছরের জীবনে এমন সংকট ও ঝুঁকিতে পড়তে দেখিনি। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পুলিশ অনেক বেশি করোনা সংক্রমণবিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয়। সঙ্গত কারণে জনগণের খুব বেশি কাছাকাছি যেতে হচ্ছে পুলিশকেই। কিন্তু পুলিশের প্রটেকশন ইক্যুইমেন্ট নাই। পিপিই’র কথা বলছি না। উন্নত মানের মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ ও টিস্যু দরকার। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই করোনায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সুরক্ষা দিতে গেলে আমার মতে ৪টি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে।
এক : একটানা ডিউটি না করে রোটেশন করা। এক/দুই ঘণ্টার জন্য ডিউটি করে চলে যাবে আরেক পার্টি আসবে। তাহলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা সম্ভব।
দ্বিতীয়ত : পর্যাপ্ত টিস্যু সরবরাহ করতে হবে। সামনে গরম। গরমে মাস্ক সামাল দেয়া খুবই কঠিন। পর্যাপ্ত টিস্যু পেপার থাকলে সেটা সামাল দেয়া সম্ভব।
তৃতীয়ত : ব্যারাকে, হোটেলে কিংবা বাড়িতে যেখানেই হোক ডিউটি শেষে ফিরলে পুলিশ সদস্যকে প্রচুর পরিমাণ গরম পানি ঘনঘন খাওয়াতে হবে।
চতুর্থত : যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পুরোপুরি আইসোলেটেড করা। এক্ষেত্রে সরকারি কমিউনিটি সেন্টারে আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যারাকে থাকা সাধারণ পুলিশ সদস্যদের করোনা সংক্রান্ত পুরোপুরি জ্ঞান দেওয়া এবং কঠোর স্বাস্থ্য নির্দেশনা প্রদান ও মেনে চলার নির্দেশনা দিতে হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের ডিসি জামিল হাসান বলেন, পুলিশের হাই অথরিটি যথেষ্ট কনসার্ন। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আলাদা করা হচ্ছে। চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে পুলিশ হাসপাতালে। যারা সুস্থ আছেন তাদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে। রাজধানীতে আক্রান্ত সাধারণ সদস্যদের আইসোলেটেড করতে ব্যারাকের বাইরে রাখা হচ্ছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদেরকে করতে ব্যারাকের বাইরে ফাঁকা হোটেল সরকারি ভবন ও হোটেলে সেপারেট রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদেরকে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। আসন্ন রমজান উপলক্ষে বুধবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সকল রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে নবনিযুক্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ সদস্যদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। ইতোমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া, দেশের ৫টি বিভাগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় যে চিকিৎসা দেয়া হবে, একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেয়া হবে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আক্রান্তদের খোঁজখবর নিতে ইউনিট প্রধানদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, যে সকল পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টাইনে, আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নিতে হবে। তাদের প্রার্থনা, বিনোদন ও বই পড়ার ব্যবস্থা করার জন্যও নির্দেশ দেন আইজিপি। তিনি বলেন, শুধু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের নয়, তাদের পরিবারেরও খোঁজখবর নিতে হবে, তারা যেন নিজেদের একা মনে না করেন।