লকডাউন মে মাসে গড়ালে ক্ষতি হবে ২ লাখ কোটি টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউরোপ-আমেরিকার করোনার চরম অবস্থার স্থায়ীত্ব দেখলে বাংলাদেশেও ভাইরাসটির প্রকোপ মে মাস ছাড়িয়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে দেশের ক্ষতি হবে দুই লাখ কোটি টাকা। মঙ্গলবার ‘অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করে এমন তথ্য জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটেউটের প্রতিবেদন বলছে, ‘চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমাদের দেশের লকডাউন মে, জুন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে মে মাস শেষে অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখ ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের মোট উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ।’ এতে বলা হয়, শিল্প খাতে বিশেষ করে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রত্যেকটি খাতের কয়েকটি উপখাত আছে। কৃষির প্রধান উপাদানগুলো হলো শস্য উৎপাদন। শিল্পখাতে প্রতিদিনের অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা।
সেবাখাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বেচাকেনা এবং জরুরিভাবে যোগাযোগ এবং আকাশপথ, পর্যটন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিয়েল এস্টেট একেবারেই বন্ধ। স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারি অংশটিতে একপ্রকার অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে সেবাখাতে প্রতিদিনের অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা। তাই প্রতিদিন কৃষি শিল্প এবং সেবা খাতে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রতিদিন এই ক্ষতির পরিমাণ অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে, যা এই মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব হয়নি। ২৬ শে মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। লকডাউন ৩০ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মে, জুন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে মে মাস শেষে অনুমিত চলতেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের মোট উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মূলত লকডাউন পরিস্থিতিতে ক্ষতির পরিমাণ যাচাই ও এক্ষেত্র প্রতিকার কী হতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের এ গবেষণা। কতদিন এবং কোন প্রক্রিয়ায় এ লকডাউন হওয়া উচিত, সেটি তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে সরকারের যে প্রণোদনা ও বাজেট সেটির মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন যাচাই করা হয়েছে, জানালেন আব্দুল হামিদ। তিনি বলেম, ‘আমরা এর মাধ্যমে সরকারকে ধারণা দিতে চাই, সরকার লকডাউন বাস্তবায়নে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এটি ইন জেনারেল না করে হটস্পট ধরে ধরে করতে হবে, যাতে বাকিরা কাজের সুযোগ পায়। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা চিন্তা করে সেটি করতে হবে। অন্যথায় সরকার চাইলেও দীর্ঘদিন সারাদেশের মানুষের খাবার সংকট নিরসন করতে পারবে না। এটিকে পশিচমা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুলনা না করে নিজেদের অবস্থা অনুযায়ী করতে হবে। এছাড়া এখন কৃষি মৌসুমে কৃষককে ভর্তুকি দিতে হবে, যাতে তারা দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে পারে। সর্বোপরি লকডাউন যাতে দীর্ঘমেয়াদি করতে না হয়, সেটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কারণ এতে করোনার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’