ক্ষুধার্ত হাতির কান্না সইতে না পেরে

0

মেহেরপুর সংবাদদাতা॥ ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে কাঁদছিল হাতিটি। অসহায় মাহুত নিজের জঠর জ্বালা কোনো মতে মেটাতে পারলেও হাতিটির খাবারের ব‌্যবস্থা করতে পারছিলেন না। চারিদিকে মানুষ ঘরবন্দি। জীবনযাত্রা স্থবির। সবাই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অস্থির। তাই হাতির কান্না কারো মন গলাতে পারছে না। বরং থেকে থেকে ক্ষুধার্ত হাতিটির গগন বিদারি চিৎকারে বিরক্তই হচ্ছেন অনেকে।
কিন্তু সবাইতো সমান নয়। এই ঘোর আশঙ্কাময় মুহূর্তে এগিয়ে এলেন মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানের শিক্ষক মোখলেছুর রহমান। মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাতির খোরাক সংগ্রহ করে বেড়াচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে যা খুবই কষ্টকর। তারপরেও সকাল-বিকাল পৌঁছে দিচ্ছেন কলাগাছসহ ঘাস-পাতা। করোনার ভয় উপেক্ষা করে হাতিটিকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন মহানুভব এই ব‌্যাক্তি। মেহেরপুর পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর উদ্যোগে গত পয়লা মার্চ থেকে মেহেরপুর শহরের সরকারি কলেজ চত্বরে তাঁতবস্ত্র ও কুঠির শিল্প মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলাটি চলার কথা ছিল ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। বিভিন্ন পণ‌্য সামগ্রীর পাশাপাশি মেলায় সার্কাসও বসে।
করোনা ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে সরকার মার্চের দ্বিতীয় সপ্তায় অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। জেলায় জেলায় লকডাউন শুরু হয়। এতে সার্কাস পার্টির লোকজন চলে যায়। আটকে পড়েন সার্কাসের একটি হাতিসহ মাহুত মুজিবর রহমান। মাহুত মুজিবর রহমান বলেন, ‘মেহেরপুরে এসে লকডাউনে হাতিটিকে নিয়ে বিপদে পড়েছি। হাতির জন‌্য দিনে প্রচুর খাবার লাগে। এই পরিস্থিতিতে তা জোগাড় করা খুবই কঠিন। ঠিক এমন সময় দেবদূত হয়ে হাজির হলেন শিক্ষক মোখলেছুর রহমান। তিনি প্রতিদিন হাতিটির খাবার যোগাড় করে দিচ্ছেন।’ শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘খাদ‌্যের অভাবে অবুঝ প্রাণিটি খুবই কষ্ট পাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় চিৎকার করছে। সেটা অনুভব করে চুপ থাকতে পারিনি। এ অবস্থায় অভুক্ত হাতিটির খাবার জোগাড় করতে যতটুকু পারছি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ হাতিটির প্রতি এমন মমতা দেখানোয় সমাজের অনেকেই শিক্ষক মোখলেছুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।