সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা: আইন কী বলে?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮’র ক্ষমতাবলে সারাদেশকে সংক্রামণ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার ফলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ও মানুষকে ঘরে রাখতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পথ খুলে গেছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইনের গেজেট হওয়ার পর থেকে এটা কার্যকর ছিল। গত ১৬ এপ্রিল সারাদেশকে সংক্রামণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করায় এই আইন প্রয়োগ করতে এখন বিন্দু মাত্র বাধা নেই। সংক্রামণ আইনকে চমৎকার ও যুগোপযোগী আইন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী জনস্বার্থে ও জনস্বার্থের স্বার্থে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ১৬ (গ) ধারার বাধা-নিষেধ অনুযায়ী কোনো স্থানে জন সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ বা সীমিত করণ করে বা ১৪৪ ধারার বাধা-নিষেধ অনুযায়ী জনবিচ্ছিন্ন করতে পারে।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘আইসোলেশন’; ‘কোয়ারেন্টাইন’ ও ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এই আইন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।’ আইনের ১১ (২) ধারায় বলা হয়েছে “(২) মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সংক্রামক রোগ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নহে, তাহা হইলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিতস্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন” সুতরাং এই ধারা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী কোনো এলাকা লকডাউন ঘোষণা করতে পারেন। ১৬ (ক) ধারা অনুযায়ী সন্দেহজনক স্থান জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট স্থানে জনসাধারণের প্রবেশ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিতকরণও করা যায়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘সারাদেশকে সংক্রামণ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এখন থেকে কোনো ব্যক্তি যদি হোম কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউন না মেনে সংক্রামণ ছড়ায় তাহলে মোবাইল কোর্ট তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের জেল দিতে পারবে। এছাড়া আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব প্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে কোনো ব্যক্তি যদি দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করেন তাহলে তাকে তিন মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন। অন্যদিকে বিদেশ কোনো ব্যক্তি বা করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি ভুল তথ্য দেন তাহলে তাকে দুই মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানারও বিধান রয়েছে এই আইনে।’ এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘আইনের ২৪, ২৫ ও ২৬ ধারা মোবাইল কোর্টের তফসিল ভুক্ত করে আদেশ জারি করায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইন অনুযায়ী অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘‘সংক্রামণ আইনের ধারা-১৪ অনুযায়ী সংক্রমিত ব্যক্তিকে আইসোলেশন ও করার সুযোগ রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে- “যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হইলে তাহার মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত হইতে পারেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তিকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, সাময়িকভাবে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর বা জন বিচ্ছিন্ন করা যাইবে।” এছাড়া আইনের ১৮ ও ১৯ ধারা অনুযায়ী কোনো যানবাহনে সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেলে উক্ত যানবাহনের মালিককে উহা জীবাণুমুক্ত করণের আদেশ দেওয়া যাবে এবং প্রয়োজনে উহা জব্দ ও করা যাবে।” এই আইনে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘সংক্রামক রোগে কেউ মৃত্যুবরণ করিলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশনা মোতাবেক দাফন বা সৎকার করিতে হইবে।’ উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল রাতে সংক্রামক রোগের (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন) এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়।