সাতক্ষীরা জেলার করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে আপনার জন্যই আজ থেকে শহরে ১০টি স্থানে দুইটি ট্রাকে জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শুরু হল ভ্রাম্যমাণ বাজার। শহরের সিটি কলেজ, খুলনা মোড়, সঙ্গীতা মোড়, ইটাগাছা, বাঁকাল এলাকায় ১টি ট্রাক এবং নারিকেলতলা, পোস্ট অফিস মোড়, রাজ্জাক পার্ক, পুরাতন সাতক্ষীরা ও কলেজ মোড়ে অন্য ট্রাকে চাল, ডাল, চিনি, লবণ, তেল, সবজি, পিয়াজ বিক্রি করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান। 
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সংকটকালীন কর্মহীন হোটেল শ্রমিক, সেলুন শ্রমিক, ভ্যানচালক, মোটরবাইক চালক, ইজিবাইক চালকসহ বিভিন্ন শ্রেণির অসহায় মানুষের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রাঙ্গনে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে কর্মহীন হোটেল শ্রমিক, সেলুন শ্রমিক, ভ্যানচালক, মোটর বাইক চালক, ইজিবাইক চালকসহ বিভিন্ন শ্রেণির অসহায় মানুষের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দেয়া হয়। উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করুন। যেহেতু করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এরকোন প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয় নাই এবং দেশে এর সংক্রমণ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই একমাত্র উপায়।
সাতক্ষীরা জেলার ঘরে থাকা স্কুল, কলেজ শিার্থীদের জন্য গ্রুপ ভিত্তিক রচনা, গল্প, কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীর নাম, শ্রেণি, শিাপ্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নাম্বারসহ তাদের লেখা আগামী ৩০ এপ্রিল তারিখের মধ্যে dcsatkhira1984@gmail.com এই মেইল ঠিকানায় পাঠাতে পারবেন। লেখার বিষয় ছাত্রছত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সাতক্ষীরা জেলার কৃষির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক সভা জেলার কৃষিবিভাগের সাথে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার কোন জমি যেন অব্যবহৃত না থাকে সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত সভার নি¤েœাক্ত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহিত হয়ঃ
১। বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখন থেকে কর্তন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের’কে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সুবিধাসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
২। জেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার সবজি ভ্রাম্যমাণ বাজার তৈরি করে নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ন্যায্য মুল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষিযন্ত্রের যন্ত্রাংশের বিক্রয়কেন্দ্র/দোকান নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। বোরো ধান কর্তন সময়ে কৃষিশ্রমিক প্রাপ্তিতে যাতে কোন সমস্য না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। উল্লেখ্য জেলা প্রশাসক নববর্ষের দিনে জেলা প্রশাসকের বাংলোর অব্যবহৃত কৃষি জমি খনন করেন এবং ফেসবুকলাইভ এ সবাইকে অব্যবহৃত কৃষি জমি চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন।
সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরন ও অভ্যিান জোরদার করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬ টার পর দোকান খোলা রাখা এবং বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ২৮ টি অভিযানে ২৫ টি মামলায় ১৫৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে তালা উপজেলায় ২ টি মামলায় ১০০০ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৭ টি মামলায় ২২০০ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ৬ টি মামলায় ৪৯০০ টাকা, আশাশুনি ৩ টি মামলায় ১১০০ টাকা, এবং জেলা প্রশাসনের ১০ মামলায় ৬৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে মোট ১৯৪৮ টি মামলায় ২০ লাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিসে ত্রাণ তহবিল খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে জেলা প্রশাসকের ঈদ বোনাস, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ, জেলা কৃষি বিভাগ তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে প্রদান করেছেন। গত ৪/৫ দিনে নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর এবং শরিয়তপুর থেকে সেখানে ঘোষিত লক ডাউনের মধ্যেও ১০ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে এসেছে। এদের মধ্যে ২৬৪৩ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং ৭১১৪ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৬ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ৯৬ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৬০০ জন এবং আশশুনি উপজেলায় ০৩ জন, দেবহাটা উপজেলায় ২৮ জন, তালা উপজেলায় ৯০০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। যে সকল মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তে আসছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক । যারা ফিরে আসছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১৯৮ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ২২ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ।করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন এমন মধ্যবিত্ত পরিবারের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত ৫৭৭ পরিবারের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার ছাড়াও অনেকে অতিরিক্ত এসএমএস ও ফোন দিচ্ছেন। সেকারণে এসএমএসএর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমটি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরমেয়রেরমাধ্যমে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের েেত্র নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৮৫০ মেঃ টন চাল এবং ৪২ ল টাকা বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৬২৫০০ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সকল সরকারি ত্রাণ বিতরণের েেত্র সকলকে ব্যাগের গায়ে “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার” কতাটি লিখে দেয়া হচ্ছে। সাতীরা জেলায় বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তা উপজেলা ও পৌরসভাওয়ারী বন্টন করে দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৬,০৩,৫০০ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ৯২ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪,৩০,০০০ টাকা, তালা উপজেলায় ১০৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪,৭৪,০০০ টাকা, আশাশুনি উপজেলায় ৯৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪,৮৪,০০০ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৬৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩,৩৭,০০০ টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৯৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪,৬১,৫০০ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ১১৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫,৩৫,০০০ টাকা, সাতক্ষীরা পৌরসভা ১০৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪,৯৭,০০০ টাকা এবং কলারোয়া পৌরসভা ৩৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১,২৮,০০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ।




