করোনার নতুন ৯ উপসর্গ, ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞেদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ হাসপাতাল ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না। অপরদিকে শতকরা ৫০ ভাগ করোনাভাইরাস রোগী জানতেই পারেন না তিনি আক্রান্ত হয়েছেন।কারণ, ৫০ ভাগ মানুষ জানতে পারে না বা বুঝতে পারে না কারণ তাদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গগুলো খুব একটা থাকে না। সামান্য যে উপসর্গগুলো থাকে তা হয়তো মামুলি গলা ব্যাথা, অরুচি বা ডায়রিয়া। এগুলো হলো নন-রেসপিরেটরি সিমটম বা উপসর্গ।করোনার নতুন নতুন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। করোনা আক্রান্ত রোগীদের অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষা করে গবেষকরা এ সব নতুন লক্ষণ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
জ্বর-সর্দি-মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট এসব কমন লক্ষণ ছাড়াও এই কয়েকদিনে আরো কয়েকটি নতুন লক্ষণের দেখা মিলেছে। বিশ্বজুড়ে অনেক করোনা রোগীর মাঝেই নতুন এই লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে। জেনে নেই এই ৯ লক্ষণ সম্পর্কে।
১. পায়ে আঘাতের চিহ্ন
পায়েও দেখা দিতে পারে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার চিহ্ন। পায়ের আঙুলে আঘাত পাওয়ার পর যেমন অবস্থা দেখা দেয়; করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন আকার ধারণ করতে পারে। গত বৃহস্পতিবার স্পেনের জেনারেল কাউন্সিল অব অফিশিয়াল পডিয়েট্রিস্ট (পায়ের যত্নের বিশেষজ্ঞ) কলেজ একটি বিবৃতি শেয়ার করেছে। সেখানে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পায়ে কয়েকটি চিহ্ন পাওয়া গেছে। এগুলো দেখতে বেগুনি বর্ণের আঘাতের চিহ্ন ও ক্ষতের মতো। সাধারণত পায়ের আঙুলের ওপর এগুলো দেখা গেছে। তবে কোনো রকম চিহ্ন না রেখেই এগুলো আবার ভালো হয় যায়।
২. ঘন ঘন টয়লেট যাওয়া
করোনভাইরাসের আরও একটি হালকা লক্ষণ হল প্রায়শই টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন। নতুন অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এই উপসর্গটি দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে ডা. ডায়ানা বলেন,হজমের সমস্যা এবং অন্ত্র অভ্যাসের পরিবর্তনগুলি – বিশেষত পাতলা মল এবং টয়লেটে আরও ঘন ঘন যাওয়া কখনও কখনও করোনার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এটা দেখা গেছে। অনেকের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা গেছে, পরে পরীক্ষায় দেখা গেছে তারা কভিড-১৯ পজেটিভ।
৩. অণ্ডকোষে ব্যথা
করোনভাইরাসটির তৃতীয় হালকা লক্ষণ অ’ণ্ডকোষে ব্যথা। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকরা অ’ণ্ডকোষে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে দেখেছেন তিনি করোনা পজেটিভ। যদিও ডাক্তাররা তার অ’ণ্ডকোষে কোনও সমস্যা খুঁজে পাননি। তবে সিটি স্ক্যানে তার ফুসফুসের ক্ষতি দেখা গিয়েছিল। এর দু’দিন পর লোকটির কভিড-১৯ পজেটিভ ধরা পড়ে।
৪. ত্বক জ্বলা যুক্তরাজ্যে অনেক কভিড-১৯ রোগীর শরীর জ্বলাপোড়া দেখা যাচ্ছে। এটা করোনার সম্পূর্ণ নতুন একটি লক্ষণ। ইতোপূর্বে এই লক্ষণটি দেখা যায়নি। যদিও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ সংস্থা এটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। আনুষ্ঠানিক এখনও লক্ষণ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি অনেকে আবার ত্বকে ঠান্ডা অনুভব করছেন।
৫. গায়েব্যথা করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা হলো, গায়ে প্রচন্ড ব্যথা ছিল তাদের। বিশেষ করে হাত ও পায়ে। সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রেও হাত, পায়ে ব্যথা থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাসের লক্ষণ হিসেবে যেহেতু এই সমস্যাটি পরিচিত, ফলে অবহেলা করার উপায় নেই।
৬. চোখ জ্বালাপোড়া ঘুম কম হওয়া, টেনশন বা রেটিনার সমস্যার কারণে চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার লক্ষণ হিসেবেও চোখ জ্বালাপোড়া করতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলোর মধ্যে ছিল চোখ জ্বালাপোড়া করা।
৭. কানে ব্যথা করোনাভাইরাসের আরেকটি লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কানে ব্যথা। কানে তীব্র বা মৃদু ব্যথা থাকতে পারে। কানের ভেতরে চাপ অনুভূত হতে পারে। কানে ব্যথা থাকলে মাসাজ করা যাবে না- বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
৮. ক্ষুধা মন্দা করোনাভাইরাসের অন্যতম লক্ষণ হলো খেতে ইচ্ছা না করা। ক্ষুধার অনুভূতি থাকে না। ফলে শরীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি আসতে পারে।
৯. মাথাব্যথা সাধারণ ফ্লু এর ক্ষেত্রে মাথাব্যথা থাকতে পারে। ডিহাইড্রেশন হয়েও সেই সময় মাথাব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে এই ব্যথা সেরে যায়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে মাথাব্যথা হলে প্যারাসিটামল খেয়েও সাধারণত ব্যথা কমে না।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৭ জন। বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৯৬ জন, মারা গেছে চার হাজার ৯৭ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৭১৬ জন।