মৃত্যুহারের চুড়ায় যুক্তরাষ্ট্র! ৪৮ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মৃত্যুহারের চুড়ায় পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র! করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন মাত্র ৪৮ ঘন্টায়। অবশ্য এমন আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং শীর্ষ সংক্রামক ব্যধি বিশেষজ্ঞ এন্থনি ফাউচি মার্চের শেষ সপ্তাহেই বলেছিলেন, এপ্রিলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ হবে সবচেয়ে ভীতিকর। তাদের এই সতর্কবার্তা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহজুড়েই দেশটিতে চলতে থাকবে এমন মৃত্যুর মিছিল। তারপর ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এই ধারা। যদিও অস্থির মানুষ হিসাবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বুধবারই বলে বসেছেন যে, করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ধাপ এরইমধ্যে পেরিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটির বিশেষজ্ঞরা তাঁর মতো তড়ঘড়ি এমন গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করতে রাজি নন। যদিও গত সপ্তাহখানেক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তির হার ক্রমশ: কমতির দিকে।
এদিকে পৃথিবীর সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত একক নগরী হিসাবে নিউ ইয়র্ক এখনও শীর্ষে। ‘স্টে ইন হোম’ আদেশের কারণে এখানকার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মাসাধিককাল ধরে ঘরবন্দী আছেন। কেবলমাত্র অতিজরুরী সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা বের হচ্ছেন বাড়ির বাইরে। টানা কয়েক সপ্তাহ বাইরে বের হতে না পারা বহু পরিবারে এরইমধ্যে মজুদকৃত খাদ্যসামগ্রী শেষের পথে। তাদের কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে বাইরে গিয়ে খাবার-পানীয় কিনে আনলেও অনেকেই সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে বের হচ্ছেন না। এ ধরণের পরিবারগুলোকে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ, রাজ্য সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে নানাভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নগরীর বন্ধ থাকা পাবলিক স্কুলগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে খাদ্য বিতরণের কেন্দ্র হিসাবে। বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে যে কেউই এসব স্কুল-কেন্দ্রে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন। তবে যারা এমনকি বিতরণকেন্দ্রেও যেতে আগ্রহী নন তাদের ঘর পর্যন্তও খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন অন্তত ১৮ লাখ ব্যক্তির ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ জন্য এগিয়ে এসেছেন নিউ ইয়র্কের ট্যাক্সি ও উবার চালকদের অনেকেই। প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার ট্যাক্সি ও উবার এই কাজে অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠন, খিষ্ট্রান মিশনারী সংগঠনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগেও খাদ্য বিতরণের কাজ চলছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষিত স্টিমুলাস প্যাকেজ বা নগদ সহায়তার অর্থ আমেরিকানদের হাতে পৌঁছাতে শুরু করেছে বুধবার সকাল থেকেই। এদিন ঘুম থেকে উঠেই বহুমানুষ নিজেদের স্মার্টফোনের নোটিফিকেশনে দেখতে পান যে তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয়েছে, যে টাকা এসেছে দেশটির রাজস্ব বিভাগ-আইআরএস থেকে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক ব্যাক্তি পেয়েছেন ১২শ’ ডলার করে এবং ১৭ বছরের কম বয়েসী শিশুদের জন্য দেয়া হয়েছে ৫শ’ ডলার করে। তবে যাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরকারের কাছে নেই এমন প্রায় ৭ কোটি মানুষের নামে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পাঠানো হবে ফেডারেল সরকারের চেক। যদিও সেই চেকে কার স্বাক্ষর থাকবে তা নিয়ে চলছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা। এরইমধ্যে হাফিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে যে, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন এই ৭ কোটি চেকে নিজের স্বাক্ষর বসাতে। কিন্তু সে রকম কোনো পূর্ব দৃষ্টান্ত না থাকায় এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। অতীতে এ ধরণের চেকে দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই স্বাক্ষর করেছিলেন।